Wednesday, October 19, 2022

দোয়া করলে তার উত্তর পেতে দেরি হয় কন?

কিছু লোক অনেক দোয়া করেন কিন্তু কোন সারা পাননা। তার দীর্ঘকাল ধরে চাইতেই থাকেন, কিন্তু কোন ফল পান না। এমন ক্ষেতগুলোতে আপনি দেখবেন শয়তান এমন লোকের কানে ফিসফিসানী শুরু করেছেন। এবং সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সম্পর্কে নীতিবাচক চিন্তা করার জন্য বিভিন্ন কুমন্ত্রণা এবং শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে



 আসুন এ বিষয়ে উত্তর আজ জেনে নিবো।

প্রশসংসা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য।

প্রথমত যে ব্যক্তিরে ক্ষেত্রে এটার ঘটে তার বিশ্বাস করা উচিৎ যে. দোয়া করার পরও সারা না পাওয়ার মাঝে একটি কারণ  ও বিশাল এক প্রজ্ঞা লুকিয়ে আছে। আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সার্বভৌমত মালিক এবং কেউ তার দয়াকে থামিয়ে দিতে বা ক্ষমতা কে নস্যাৎ করতে পারে না। তিনি দয়া করে কেউকে কিছু দিতে চাইলে বা ন্যায় বিচার করে কাউকে দিতে না চাইলে তার ইচ্ছাকে প্রভাবিত করে এমন কোন শক্তি বা সত্বা নেই। আমরা তার বান্দা আর আমাদের সাথে তাই করেন যা তিনি পছন্দ করেন। সুরা আল কাসাস এর ৬৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন আর তোমাদের প্রভু! যা ইচ্ছা ও পছন্দ তাই সৃষ্টি করেন। এতে তাদের কোন পছন্দের অবকাশ নেই। কোন যুক্তিতে একজন কর্মচারী মালিককে তার প্রাপ্য সম্মান না করেই নিজের পাওনা পুরোটাই দাবী করতে পারে। অবাধ্যতা নয় আনুগত্য। ভুলে যাওয়া নয়, স্মরণ। অকৃতজ্ঞতা নয় ধন্যবাদ পাওয়াটাই তার অধিকার। আপনি যদি নিজের দিকে আর দেখেন কিভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করছেন, তবে নিজেকে খুবই নগন্ন মনে হবে। আপনি অপমানবোধ করবেন আর উপলব্ধি তার ক্ষমা ও দয়া ছাড়া কোন মুক্তিই নেই। তাই সৃষ্টিকর্তার ও বিধায়ক আল্লাহর দাস হিসেবে নিজেকে রাখুন।

এবার আসুন দিত্বীয় পয়েন্টে: আল্লাহ মহান জ্ঞানী তিনি কারণ ছাড়া কাউকে কিছু বা দেন বা দেওয়া থেকে ফেরান না। আপনি কোন কিছুর দিকে তাকিয়ে সেটাকে খুব ভালো ভাবতে পারেন যা আপনার কাছে যন্ত্রণাদায়ক মনে হবে। যদিও তা রোগীর সবোচ্চ স্বার্থেই করা হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে একটি কুরআন এর আয়াত বলতে চাই সুরা নাহলের ৬০ নং আয়াত “আর আল্লাহই সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী” এ আয়াতের সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। আপাত দৃষ্টিতে দোয়াটি কবুল হয়নি ঠিক আছে কিন্তু এর ধারা আপনি অধিক কল্যাণ পেয়ে গেলেন। যা হয়তো আপনি আমি সাময়িক সময়ের জন্য বুঝতে পারবো না।

তৃতীয় পয়ন্টি হচ্ছে। ব্যক্তি যা চায় তার প্রত্যেকটি তাকে দেওয়া হলে তা তার জন্য অমঙ্গলজনক হতে পারে। একজন সালাফের বর্নণা অনুযায়ী তিনি কোন সামরিক অভিযানে যাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। কিন্তু কিনি একঠি কণ্ঠ শুনতে পান। তুমি সামরিক অভিযানে গেলে বন্দী হবে। আর বন্দি হয়ে গেলে খিষ্টান হয়ে যাবে। ইবনুল কায়্যিম বলেন: আল্লাহ তার বিশ্বাসী বান্দাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা রহমত স্বরূপ। যদিও তা প্রদান বন্ধ করে হতে পারে। পরীক্ষা হলেও সেটি কল্যাণকর আর তার নির্ধারিত দূর্যোগ ও মঙ্গলজনক যদিও তা পীড়াদায়ক হয়। কেউ জানেনা তার বিষয়গুলো কিভাবে শেষ হবে। সে এমন কিছু চাইতে যা তাকে পরিচালিত করবে, কূফলের দিকে যাতে তার ক্ষতি হয়ে যায়। তার জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো তা অদৃশ্যের মালিক আল্লাহই ভালো জানেন।

আর এমন হতে পারে তুমি যা অপছন্ত করছো তা তোমার জন্যই মঙ্গলকর। সূরা বাক্বারা আয়াত নং ২১৬। এ আয়াতের একটি অর্থ হতে পারে, যে আমাদের এমনভাবা উচিৎ নয় যে, বিধাতার বিধান অন্যরূপ অথবা তার কাছে এমন কিছু চাওয়া উচিৎ নয় যে বিষয়ে আমাদের জ্ঞান নেই। এজন্য যে তা আমাদের অজান্তেই আমাদের ক্ষতি করবে। তাই আমাদের জন্য আমাদের প্রভু যা পছন্দ করেছেন তা ভিন্ন অন্ন কিছু আমাদের পছন্দ করা উচিৎ নয় বরং তার কাছে আমাদের কোন শুভ পরিনতী কামনা করা উচিৎ। আর এজন্য যে এছাড়া অধিকতর উপকারী আমাদের জন্য আর কিছুই নেই।

 

চতুর্থ পয়েন্ট হচ্ছে। বান্দা নিজের জন্য যা পছন্দ করেন তা হচ্ছে আল্লাহ তার জন্য যা পছন্দ করেন তাই শ্রেষ্ট। আল্লাহ তার বান্দাকে এতটাই ভালো বাসেন, যতটা বান্দা নেজেকেই ভালোবাসতে পারেনা। যদি তার এমন কিছু হয় যা সে অপছন্দ করে, তাহলে সেটা না ঘটার চেয়ে ঘটাইম উত্তম। তাই তার বিধান দয়া ও মমাতয় ভরপুর। বান্দা যদি আল্লাহর সিকট তা আত্মসমর্পণ করেন। আর বিশ্বাস করেন যে, সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ এবং সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণাধীন। এবং তার প্রতি তিনি নিজ অপেক্ষা অধিক দয়াশীল, তবেই সে কাঙ্খিত বস্তুটি না পেলেও তার মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হবে না।

পঞ্চম বিষয়টি হচ্ছে: এমন হতে পারে যে, ব্যক্তি এমন কিছু করছেন যার জন্য তার দোয়া কবুল হচ্ছে না বা বিলম্ব হচ্ছে। হতে পারে তার খাদ্য হারাম। হতে পারে তিনি যখন দোয়া করেছেন তার মনের ঐকান্তিকতার অভাব ছিল: হতে পারে তিনি কোন পাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় দোয়া করেছেন। তাই দোয়া আর সাড়া পেতে দেরি হওয়াটা ব্যক্তির নিজেকে সামলে নিতে। প্রভুর সম্মুখে কিভাবে দাড়াতে হবে তা শুধরে নিতে  তাগিদ দেয়। যাতে করে সে নিজে সংশোধিত ও অনুতপ্ত হয়।

যদি সে দোয়ার সাড়া দ্রুত পেতো হয়তো সে বেখেয়াল হয়ে যেত। যা কিছু করছে তা ঠিক বলে মনে কের তা করেই ফেলতো। তারপর তার ভেতর আত্ম-তুষ্টির মনোভাব তৈরি হতো যা তাকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যেতো।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমন কোন মুসলিম নেই যে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আর তার কোন পাপ নেই বা পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করেনি। অথচ আল্লাহ তাকে তিন পদ্ধতীর যে কোনভাবে পুরস্কার দেবেন। হয়তো আল্লাহ তার দোয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেবেন, বা তিনি পরকালে প্রতিদান দেয়ার জন্য জমা রাখবেন। অথবা এই কারণে তার সমপরিমান পাপ মোচন করে দিবেন।

সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু গনকে জানতে চাইলেন আমরা যদি অনেক বেশি দোয়া করি?

তিনি বললেন আল্লাহ ততোধীক মহান।

পরিশেষে বলতে চাই দোয়া করে ফল লাভ না করার বা দেরিতে করার অনেক কারণ রয়েছে। এটা আমাদের অবশ্যই মানতে হবে এবং দোয়া করা থামিয়ে দিলে চলবে না। কেননা দোয়া সবসমই আমাদের জন্য কল্যাণ এবং মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সমস্ত বিষয়ে সর্বোজ্ঞ।

 

………………………………………………………………………………………………………………………………….

আজান চলাকলীন যে কাজগুলো অবশ্যই করবেন, আর যে কাজগুলো একেবারেই করবেন না।

আসুন যেনে নেওয়া যাক। পৃথিবীর সবচেয়ে সমুধুর ধ্বনীর নাম আজান এটি মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে কোটি মানুষের উপলব্দি। ইন্টারনেটে অঝস্র ভিডিওস রয়েছে যেখানে দেখা যায়। একজন অমুসলিমও আজানের বানী শুনে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যায়। তা হবেনা কেনো ?

এ আজান তো সৃষ্ঠির প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার আহ্বান। একজন মানুষকে যখন তার মহান মালিকের প্রতি আহব্বান করা হয়, তার উপলব্ধি তখন কেমন হতে পারে। তাই আজানের আওয়াজ শুধ মুসলমানের অন্তরেই নারা দেওয়না বরং তা অমুসলিমের অন্তরকেও আকর্ষণ করে। যুগ যুগে যার অজস্য উদাহারণ রয়েছে। হ্যা হিংসুক ও নিন্দুকের কথা ভিন্ন। আল্লাহর ভাষায় যার অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন সেতো হেদায়েতের আলো থেকে বঞ্নিত হবে। তাই ইসলামে আজানের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আজান শুনে আজানের জওয়াব দেওয়ায় রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। আজান শ্রবণকারীরও মৌখিকভাবে আজানের উত্তর দেওয়া সুন্নত।

রাসুলুল্লাল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমরা আজান শুনবে এর জবাব মুয়াজ্জিনের অনুরুপ তোমরাও বলবে। আজানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতীতি গুলো আমাদের প্রত্যেকেরই জানা রয়েছে। মুয়াজ্জিন প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর, শ্রোতা ঐ বাক্যটি নিজেও অনুরুপভাবে বলবে। কিন্তু মুয়াজ্জিন “হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ” বলার সময় শ্রোতা “লা হাওলা ওয়া কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহ” বলবে। এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৮৫)।

তবে কোন কোন বর্ণনায় “হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ” বলার সময় মুয়াজ্জিনের অনুরুপ বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (কিতাবুত দাওয়া, তাবারানী হাদসি নং ৭৫৮)।

“আস্সালাতু খাইরুম মিনাল নাউম” এর জবাব, ইসলামী ফিকাহের বিভিন্ন কিতাবের বর্ণনামতে ফজরের আজানে “আস্সালাতু খইরুম মিনাল নাউম” এর জবাবে, সাদাকতা ও বারাকতা বলতে হবে। “আস্সালাতু খইরুম মিনাল নাউম” শব্দের অর্থ হলো, ঘুম থেকে নামাজ উত্তম” কিন্তু হাদিস ও সুন্নাহে এর কোন প্রমান না পাওয়া যাওয়ায় বিশুদ্ধতম মতানুশারে “আস্সালাতু খইরুম মিনাল নাউম” এর জবাবে মুয়াজ্জিনের মত অনুরুপ “আস্সালাতু খইরুম মিনাল নাউম” বলাই উত্তম।]

কেননা হাদিস শরীফে এসেছে, আজানের জবাবে তোমরা মুয়াজ্জিনের অনুরুপ বলবে।

প্রচলিত কিছু ভুল আছে সেরকম দুটি ভুলও আলোচনা করছি। কেউ কেউ আজানে আল্লাহু আকবার এর জবাবে জাল্লা জালালুহু পরে থাকেন, এটি সুন্নাহ পরিপন্থী

 অনেকেই আজানের সময় জবাব দিতে গিয়ে “আশহাদু আননা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাল্লাহ এর জবাবে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলে থাকেন। এটিও ঠিক নয় কেননা এসময় দরুদ পড়ার নির্দেশ নেই বরং তখনও মুয়াজ্জিনের অনুরুপ আশহাদু আননা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলাই সুন্নাত। আল বাহরুহু রায়েক প্রথম খন্ডের ২৭৩ পৃষ্ঠা আহসানুল ফতওয়া দ্বিতীয় খন্ডের ২৭৮ পৃষ্ঠা। আর এই দরুদ পাঠ করা উচিত আজান শেষ হওয়ার পর। আমাদের দেশে আজানে “আশহাদু আননা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” বলার সময় অনেকে বৃদ্ধা আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মুছে থাকেন। কেউ কেউ আবার সংগে “কুররাত আইনি ” এই দুয়াও পরে থাকে। অথচ ইসলামের শরিয়তে এর কোন প্রশান নেই। শুতরাং এটি বর্জণীয়। প্রসিদ্ধ আছে আজানের জওয়াব না দিলে বা আজানের সময় কলা বললে, বেইমান হয়ে যাই কিংবা বেইমান অবস্থায় মারা যাওয়ার ভয় আছে। এরুপ কোন বর্ণনাও হাদিসের কিতাবে নেই।

সুতরাং এটিও ভ্রান্ত বিশ্বাস। তবে আজানে চুপ থাকতে হবে। যারা আজানের জওয়ার দিবে না। নামাজ আদায়কারী, অনাহার অবস্থায়, ইস্তেন্জাকারী ইত্যাদি সময় জওয়াব দেওয়া যাবে না। তবে অনেক আলেমদের মতে আজানের পরক্ষনে যদি উল্লেখিত কাজ থেকে অবসর হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আজানের জওয়াব দিয়ে দেওয়া উত্তম। কুরআন তিলাওয়াতকারী তিলাওয়াত সাময়িক বন্ধ রেখে আজানের জওয়ার দেওয়াই উত্তম।

জুমআর দ্বিতীয় আজানের জওয়াব জুমআর দ্বিতীয় আজানের সময় যখন খতিব সাহেব মিম্বরে উপবিষ্ট থাকেন, তখন ফিকাহ বিদদের নির্ভযোগ্য মতানুযায়ী, জুমআর দ্বিতীয় আজানের জাওয়াব মৌখিক না দেওয়াটাই উত্তম। তা সত্বেও কেউ দিতে চাইলে মনে মনে জবাব দিতে পারেন।

আজানের সময় দুনিয়াবী কথা ও কাজে লিপ্ত থাকা, আজানের সময় চুপ থাকা সুন্নত। একান্ত প্রয়োজন না হলে সাধারন দ্বিনী ও দুনিয়াবী কথা বা কাজে লিপ্ত থাকা অনুচিৎ। বক্তিৃতা বা সেমিনার চলাকালে আজান হয়ে সাময়িক তা স্থগিত রাখবে। ওয়াজ বা কোন দ্বিনী মাহফিল চলাকালেও তা সাময়িক বন্ধ রেখে সবাইকে আজানের জওয়াব দেওয়া উত্তম।

মনে রাখতে হবে। একজন আজানের জওয়ার দিলে সবার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়। কেনন আজানের জওয়াব দেওয়া শ্রবণকারী সব মুসলমানের জন্য সুন্নত। আর আজানের জবাব দেওয়া সুন্নতে কেফায়া। রেডিও টেলিভিশনের আজানের সরাসরি সপ্রচার করা হলে জবাব দেওয়া সুন্নত। রেকর্ড করা হলে তার জবাব দেওয়া সুন্নত নয়। আজানের পর দরুদ শরীফ ও দোয়া পাঠ করা সুন্নত। হাদিস শরীফে এর ফিজলত বর্ণিত হয়েছে। রসুলুল্লাল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আজানের পর আল্লাহুম্মা রব্বাহাজিহিদ্দা ওয়াতিতাম্মা। এই দোয়াটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করবে তার জন্য আখিরাতে আমার সুপারিশ অবধারিত বুখারী- হাদিস নং ৬১৪।

অন্য বরর্ণনায় রয়েছে। তোমরা মুয়াজ্জিনের অনুরুপ শব্দের আজানের জবাব দাও অতপর দরুদ পাঠ কর। এরপর আমার জন্য বেহেস্তের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানের জন্য দোয়া করো। আশা করি আল্লাহ তায়ালা আমাকেই সেই স্থান দান করবেন। যে ব্যক্তি এ দোয়া করবে, তার জন্য আখিরাতে আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যায়। মুসলিম হাদিস নং ৩৮৪।

আজানের পর হাত তোলে মুনাজাত,

আজানের পর দরুদ শরীফ পরে একটি বিশেষ দোয়া পরার কথা হাদিস শরীফে রয়েছে। তবে আজানের পর হাত তুলে দোয়া পরা ও মুনাজাত করার কথা উল্লেখ নেই। আল্লাহুম্মা রব্বাহাজিহিদ্দা ওয়াতিতাম্মা এ দোয়াটি শেষ পর্যন্ত পরার জন্য হাত তোলার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা নেই।

আজানের মতো মুসল্লিদেরে একামতের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। একামতের জবাবও আজানের অনুরুপ। শুধু একামতের মধ্যে, “কাদকা মাতিস সালাহ”, এর জবাবে, ‘আকাহমাল্লাহু ওয়া আদামাহা বলবে। হযরত আবু উমামা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত একবার হযরত বেলাল রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একামত দিচ্ছিলেন তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গে আজানের অনুরুপ উত্তর দিয়েছেন, তবে কাদকা মাতি সালাহ বলার সময় বলেন, আহকামাল্লাহু ওয়া আদামাহা।

 

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকালে সায়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে যদি সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যায়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে সুবহান আল্লাহ।

আর যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সন্ধ্যায় “সায়্যিদুল ইস্তিগফার” পড়ে, সে যদি সকাল হওয়ার আগেই মারা যায়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহিহ বোখারি: ৬৩০৬

আসুন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শেখানো ইস্তেগফারের দোয়াটি আমরা সবাই শিখে নেই।

আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি। লা ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা। ওয়া আনা আলা আহদিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু। আউজু বিকা মিন শাররি মা-সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগফিরলী। ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনবা ইল্লা আনতা। অর্থাৎ হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনিই আমার স্রষ্টা এবং আমি আপনার দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের উপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি। আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উওর আপনার দানকৃত সব নেয়ামত স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না সুবহান আল্লাহ।

এছাড়াও সূরা আন-নূর এ বলা হয়েছে।- মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।

আর সূরা আশ-শুরা- তিনি তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন পাপসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমাদের কৃত বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন: হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা) প্রত্যাশা করবে, তুমি যা-ই প্রকাশ হোক না কেন আমি তা ক্ষমা করে দেব- আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ্ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গোনাহ্ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে আখেরাতে সাক্ষাত কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো। [তিরমিযী তে হাদিস খানা বর্ণনা হয়েছে হাদিস নং-৩৫৪০)

আবু সাইদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন বনী ইসরাইলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছিলো। অতপর সে ফতওয়া জিজ্ঞেস করার জন্য বের হলো এবং একজন দরবেশের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলো তার ভিতরে অনেক অপরাধবোধ কাজ করছিলো, সে হতাস হচ্ছিল সে ভাবছিলো যে, তার হয়তো কোনদিন ক্ষমা হবে না। এরুপ ব্যক্তি জন্য কোন তওয়া আছে কি, সে জিজ্ঞেস করলো তিনি বললেন নেই। যেই লোকটি তাকে নেই বললেন, সে আলে নয় একজন জুলুমকারী ছিল এবং সে তাকেও হত্যা করলো এবং বারবার লোকদের জিজ্ঞেস করতে থাকলো অমু গ্রামে যাও অমুককে জিজ্ঞেস করো সময় তার মউত এসে গেলো এবং মৃত্যুকালে সে স্বীয় বক্ষককে ঐ গ্রামের দিকে কিছু বাড়িয়ে দিলো। অতপর রহমতের ফেরেস্তা ও আজাবের ফেরেস্তার দল পরস্পর ঝোগড়া করতে লাগলো। তারা তার রুহ নিয়ে যাবে। এ সময় আল্লাহ তা’য়ালা ঐ গ্রামকে বললেন তুমি মৃত্যের নিকট আসো। আর তার নিজ গ্রামকে বললো তুমি দুরে সরে যাও। অতপর ফেরেস্তাদের বললেন। তোমরা উভয় দিকের দুরত্ব মেপে দেখ মেপে তাকে এই গ্রামের দিকে বিঘত নিকটে পাওয়া গেলো। অর্থাৎ যেদিকে তওবার জন্য দৌড়াচ্ছিল, আল্লাহু আকবার, সুতরাং তাকে মাফ করে দেওয়া হলো। বুখারী , মুসলিম, মেসকাত শরীফেও হাদিসখানা বর্ণনা হয়েছে ২২১৯ নং হাদিস।

আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীদে অত্যান্ত ভালোবাসেন। বান্দা যখন তার অপরাধের জন্য অনুশুচনায় দগ্ধ হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থণা করেন, তিনি তখন আনন্দিত হন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার তওবাতে কি পরিমাণ আনন্দিত হন তা নিম্নোক্ত হাদিসটি দেখুন।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাদেম আবু হামজা আনাস বিন মালিক, রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন লোক বিজন মরুপ্রান্তরে উট হাড়িয়ে যাবার পর, পূণরায় তা ফিরে পেলে যে পরিমান আনন্দে উদ্বেলিত হয়, মহান আল্লাহ বান্দার তওবাতে তার চেয়ে বেশি আনন্দিত হন- সহিহ বুখারী।

আনাস ইবনুল মালিক, রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি বারাকাতময় আল্লাহ তায়ালা বলেন হে আদম সন্তান যতক্ষন আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার থেকে ক্ষমা পাওয়ার আসায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করবই। এতে কোন পরোয়া করবো না। হে আদম সন্তান তোমার গুনাহর পরিমাণ যদি আসামানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্ত পৌছে যায়, তার পরও তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। এতেও আমি পরওয়া করবো না।

সর্বশেষ বুখারী শরীফের ৫৯৯৯ এর হাদিসের উর্দ্ধিতি দিয়ে শেষ করছি উমর ইবনুল খাত্তাব হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট কতগুলো যুদ্ধ বন্দিকে হাজির করা হলো। বন্দিদের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল, যার স্তন ছিলো দুধে পূর্ণ, সে বন্দিদের মাধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে কোলে নিত, এবং আদর করে নিজের বুকের দুধ পান করাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেন, তোমরা কি মনে করঃ এই স্ত্রী লোকটি তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললাম ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনও ফেলবেনা। তারপর তিনি বললেন, এই স্ত্রীলোকটি তার সন্তানের প্রতি যতটা দয়ালু, আল্লাহ তার বান্দার উপর তার চেয়েওে বেশি দয়ালু, সুবহান আল্লাহ।

 

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাল্লাহু থেকে বর্ণিত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ব্যভিচারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকেনা। চোর যখন চুরির কাজে লিপ্ত হয় তখন সে, মুমিন থাকে না। মদ্যপ ব্যক্তি যখন মদ পানে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকেনা। কিন্তু তার পরও তার জন্য তওবার দরজা খোলা থাকে- সুবহান আল্লাহ।

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রত্যেকটি ভাইকে তওবাতুন নসুয়া করার তৌফিক দান করুক। এবং আমরা যেন অবশ্যই মৃত্যুর আগে একবার হলেও সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার বা তওবার শ্রেষ্ঠ দোয়াটি পড়ে যেতে পারি আমিন।