আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
মেয়েদের জন্য সাজসজ্জার ১১টি ইসলামী বিধান নিয়ে আজের ভিডিওতে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ সুন্দর, তিনি
সৌন্দয্য পছন্দ করেন। তবে এর একটি সীমারেখা নির্ধারিত আছে, কোন সৌন্দর্য্যের প্রদর্শণ
যেন পাপে পরিণত না হয়। কোন নারী সে যাদের কাছে বৈধভাবে যেতে পারবে, যাদের সামনে বৈধভাবে
হাটা চলা করতে পারবে, তাদের সামনে সাজসজ্জা করাটা মোটেও পাপের কিছু নয়, বরং ইবাদাত।
যে সব সাজ সামগ্রী হালাল বস্তু দ্বারা তৈরি, এবং যে সকল সাজ সজ্জার দ্বারা
আল্লাহর সৃষ্টি করার গঠনে কোন বিকৃতি ঘটেনা, তা ব্যবহার করা জায়েজ। পরিস্কার, পরিচ্ছন্নতা
ও সাজসজ্জা ইসলামী জীবন রিতির অবিচ্ছেদ অংশ এবং ইবাদতের অংশ। তাই নারীরা অবশ্যই সাজ
সজ্জা করবে, এটাই ইসলামের শরীয়তের বিধান, তবে ইসলাম নির্দেশ করে যে, স্ত্রী যেন ঘরে
তার স্বামীর জন্য সর্বোত্তমভাবে সাজ সজ্জা করে। স্বামীর উদ্যেশ্যে সাজ সজ্জা করাটাকে
ইবাদত বলা হয়েছে। আজীবনের সঙ্গী অথবা সবসময় দেখছে বলে তার সামনে একেবারে অগোছালো থাকা
ইসলামী শিক্ষা বিরোধী।
মেয়েদের জন্য সাজ সজ্জার ১১টি ইসলামী বিধানের প্রথমটি হচ্ছে পোশাক। নারী
ও পুরুষ যেহেতু পৃথক সত্ত্বা, তাই সৃষ্টিগতভাবে তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। এ পার্থক্য
বজায় রাখা জরুরী। তাই নারীদের জন্য পুরুষের কাটছাটের পোশাক পরিধান করা এবং তাদের বেস
ধারণ করা নিষিদ্ধ। টাইট ফিট জামা, টাইট ফিট বোরখা বা পাতলা পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া
কোন মুসলিম নারীর জন্য জায়েজ নয়।
আবু ইয়াজিদ মোজানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু মহিলাদের কাতাদী অর্থাৎ মিশরে প্রস্তুতকৃত একধরণের সাদা কাপড়, এই কাপড়টা
তিনি পড়তে নিষেধ করতেন। তারপর লোকেরা বললো, এ কাপড়ে তো আর শরীর দেখা যায়না। এটাতো পাতলা
না। এর উত্তরে তিনি বলেন; হ্যা- এই কাপড়ে তক দেখা যায়না তা ঠিক, কিন্তু এই পোশাকগুলো
এতটাই আটোসাটো যে, অঙ্গ-পতঙ্গ ফুটে ওঠে। তিনি আরো বলেন; নারীদের ছেলোয়ার ঠাখনুর নিচে
থাকা উচিৎ।
নারীরা যে কোন কাচের তৈরি বা ধাতুর তৈরি চুরি অলংকার পরিধান করতে পারবে।
সোনা, রূপা, পিতল, তামা ইত্যাদি ধাতুর সবরকমের অলংকার ব্যবহার করতে পারবে। তাই কান
ও নাক ফোড়ানোর পর, এই সকল ধাতুর অলংকার পরিধান করাতে ইসলামে কোন বাধা দেয়না।
তিন নম্বর হচ্ছে চুলকাটা।
অনেক সময় নারীদের বিভিন্ন প্রয়োজেনে মাথার চুল কাটতে হয়। কোন অপারগতা,
অক্ষমতা বা বিশেষ ধরণের কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে যদি সে চুল কাটে, তবে ক্ষমা রয়েছে। কিন্তু
এছাড়া মাথা মন্ডল করা বা নারীদের চুল ছোট করে ফেলা ইসলামে বৈধ নয়, এটি গোনাহের কাজ।
চার নম্বর হচ্ছে, নারীদের মুখে পশম হলে কি করণীয়?
নারীদের গোফ দাড়ি হলে মন্ডিয়ে ফেলা মুস্তাহাব। এটা কোনভাবেই মুখে রেখে
দেওয়া যাবে না। তবে সবচেয়ে ভালো হয়, কোনভাবে যদি কোন প্রক্রিয়ায় এসকল অবাঞ্চিত লোম
মুল থেকে তুলে ফেলা যায়, তাহলে আরো ভালো।
পাচ নম্বরে হচ্ছে; নখ বড় রাখা।
হাত পায়ের নখ বড় রাখা বে-জাতীয়দের স্বভাব ও একটি ঘৃনিত কাজ। অনেক সময়
নখের ভেতর ময়লা জমে, খাবারে সময় পেটে চলে যাওয়ার আশংকা থাকে। প্রতি সপ্তাহে হাত পায়ের
নখ কাটা সুন্নত। অন্তত দুই সপ্তাহের একবার কাটলেও চলবে, তবে চল্লিশ দিনের বেশি না কাটা
অবস্থায় অতিবাহিত হলে গোনাহ হবে।
ছয় নম্বর হচ্ছে নেইল পালিশ;
নেইল পালিশ যদি পবিত্র বস্তু দ্বারা প্রস্তুত করা হয়, তাহলে তা ব্যবহার
করা যায়েজ। তবে নেইল পালিশ যেহেতু পানি প্রবেশের প্রতিবন্ধক, তাই নখে থাকা অবস্থায়,
অযু ও ফরজ গোসল হবে না। নখ থেকে তুলে অযু ও ফরজ গোসুল করতে হবে। বারবার অযুর সুবিধার্থে
নেইল পালিশ ব্যবহার না করাই অধিক নিরাপদ।
সাত নম্বর হচ্ছে মেহেদী;
নারীদের জন্য সর্বদা হাত-পা মেহেদী দ্বারা রাঙিয়ে রাখা মুস্তাহাব। এতে
স্বামী আনন্দিত হয়। অযু ও গোসলেও কোন সমস্যা হয় না। কেউ কেউ পায়ে মেহেদী লাগানো কি
খারাপ? নাকি গুনাহ হবে? এমনটা ভেবে পায়ে মেহেদী লাগান না এবং এ সম্পর্কে একটা যুক্তি
রয়েছে যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়িতে মেহেদী লাগাতেন অতএব, এই মেহেদী
কোনভাবে পায়ে লাগানো যাবে না এটা বেয়াদবী। কিন্তু এই যক্তিটি একেবারেই সঠিক নয়।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো দাড়িতে তেলও লাগাতেন, তাই বলে
কি আমরা পায়ে তেল লাগানো বন্ধ করে দিয়েছি? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তেল, ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার করতেন। তাই তেল ব্যবহার করা সুন্নত। তবে ক্রীম-স্নো- পাউডার
যা বর্তমান সময় পাওয়া যায়, এগুলো যদি, হালাল বস্তু দ্বারা তৈরি হয়, ইনগ্রেডিয়্যান্স
দেখতে হবে, যদি সবগুলো বস্তু হালাল হয়, তাহলে ব্যবহার করতে কোন দোষ নেই।
আট নম্বর হচ্ছে; পারফিউম বা বডি-স্প্রে।
ফারফিউম বা বডি-স্পে যদি কোন নাপাক বস্তুর বিস্তৃতি না থাকে তাহলে তা
ব্যবহার করা যায়েজ। মুসলিম নারীরা গৃহের মধ্যে অবশ্যই সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে,
এতে তার কোন বাধা নেই।
তবে সাবধান! কোনভাবেই বাইরে বের হওয়ার সময় সু-গন্ধি ব্যবহার করা যাবে
না।
নয় নম্বর হচ্ছে ব্রু-প্লাগ করা।
নারীরা নিজেদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উপায়ে ব্রু- চিকন করার
যে প্রথা বর্তমানে প্রচলিত আছে! তা বৈধ নায়; সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বর ২১২৫।
দশ নম্বর হচ্ছে দাঁত ফাকা করা;
কৃত্রিমভাবে দাতের মধ্যে ফাঁকা তৈরি করা যায়েজ নয়। তবে যে কোন দাত, অস্বাভাবিক
বাকা বা অতিরিক্ত থাকলে, তা সোজা করা বা তুলে ফেলা বৈধ। এতে কোন বাধা নেই।
এগারো নম্বর হচ্ছে পরচুলা;
নারীরা পরচুলা ব্যবহার করতে পারে, যদি তা সুতা-পশম, কাপড় বা এ জাতীয় কিছু
দ্বারা তৈরি করা হয়, এবং চুলের সদৃশ না হয়। আর যদি মানুষের চুল দ্বারা তৈরি করা হয়
বা চুলের সাদৃশ্য হয়, তাহলে এই পরচুলা ব্যবহার করা একেবারেই হারাম।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সমস্ত মা-বোনকে ইসলামী নিয়ম অনুযায়ি সাজ সজ্জা ধারণ করার তৌফিক দান করুক। সাজ সজ্জার দ্বারা গুনাহ নয়, বরং নেকী অর্জন করার তৌফক দান করুক- আমিন।
এই ২৫টি স্বভাবের মধ্যে, যেকোন একটি স্বভাব আপনার মাঝে থাকলে জাহান্নামে
যাবেন।
প্রিয় দর্শক এই ভিডিওটি দেখলে জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে করা পাপগুলি আপনি
খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
আমাদের খুব পরিচিত ২৫টি স্বভাব আমরা বুঝতেও পারিনা যে এগুলোর কারণে আমরা
জাহান্নামী হতে পারি। সময় থাকতে যদি এগুলো না বুঝতে পারি। তবে কিভাবে তাওবা করে এসব
থেকে মুক্ত হবো?
এক আমাদের কেউ একজন একটা কথা আমানত হিসেবে বললো এবং অনুরোধ করলো, ভাই
আপনি এই কথাটা কাউকে বলবেন না। অথচ আমিও ঐ আরেকজনকে আবার এই কথা বলে দিয়েছি এবং সাথে
বললাম ভাই আপনি না কাউকে বলবেন না। এভাবে কথাটা অপেন সিক্রেট হয়ে গেলো এবং মানুষ যেনে
গেলো। এভাবে কথার আমানত খেয়ানত করার জন্য আমরা জাহান্নামী হব।
মনে রাখবেন জাহান্নামের উদ্বোধন হবে মুনাফিক দিয়ে। এ জাতীয় মুনাফিক যারা
মানুষের কথার আমানত পর্যন্ত রক্ষা করতে পারে না। আজ থেকে সতর্ক হয়ে যান। অনেক নামাজী,
রোজাদার মানুষ কিন্তু এই আমানত খেয়ানত করনে, সাবধান। আগে থেকে বলে দিবেন যে ভাই আমি
পেটে কথা রাখতে পারি না। আপনার কথা হয়তো কাউকে বলে দিবো কিছু মনে করবেন না। তাহলে অন্তত
আপনার পাপ কম হবে।
দুই নাম্বার হচ্ছে আমি গুলশানে দাড়িয়ে কাউকে মোবাইলে বললাম, ভাই আমি তো
মতিঝিল চলে এসেছি। আমি আছি এখনো রিক্সায় বা অনেক দুরে অথচ বাসার লোকদের জানাচ্ছি আমি
এখন সিড়ী দিয়ে বাসার উঠছি এটাও কিন্তু মুনাফিকী।
তিন নম্বর হচ্ছে; কোন ব্যক্তিকে এই কথা বলাঃ এই তুইতো কিছুদিন আগে আমার
কাছে একটা চাকরীর জন্য এসেছিলি। চাকরী দিলাম, আজকে টাকা ইনকাম হয়েছে আর সব ভুলে গেলি?
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; কারো উপকারের পর এ জাতীয় কথা
বলে তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করা, ভরা মজলিশে খোটা দিয়ে অপমান করা। এটি নিঃসন্দেহে জাহান্নামের
জন্য যথেষ্ট।
মনে রাখবেন, প্রয়োজনে মানুষের উপকার বাদ দিয়ে দিন। কিন্তু উপকার করে এ
জাতীয় কথা বলে আপনার নিজের আমল ধ্বংশ করবেন না এবং জাহান্নামের রাস্তা সুগম করবেন না।
চার নম্বর হচ্ছে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মেয়ের দিকে তাকালেন। মেয়টা
ইসলামী পোশাক পড়া নেই, এবং দেখতে সে বেশ আকর্ষণীয় এর পরের বার আর তাকাবেন না। প্রথমবার
আপনার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। কিন্তু এরপরের দৃষ্টির গুনাহ মাফ হবে না।
পাচ নম্বর হচ্ছে; আপনি জীবিত এবং সুস্থ থাকা অবস্থায় যদি আপনার স্ত্রী
বেপর্দা হয়ে বাজার সদাই করতে হয়, তাহলে আপনি দাইয়ুস। আপনার অবস্থান সরাসরি জাহান্নাম।
ছয় নম্বর হচ্ছে; সন্তান বড় হয়েছে অথচ তাকে পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা দেন
নি। সালাতের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন না। এ সন্তান জান্নাতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকলেও,
তার বাবার জান্নাতে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ কেন জানেন?
কারণ সন্তান হয়তো পরবর্তী জীবনে আমলী এবং নেক্কার হয়ে যাবে। কিন্তু পিতার
দায়িত্বহীনতার কারণে সে জাহান্নামী হবে।
সাত নম্বর হচ্ছে; টাকনুর নিচে পোশাক ছেড়ে দেওয়া। পুরুষদের জন্য এটি জাহান্নামে
যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। যদি টাকনুর নিচে সে কাপড় ছেড়ে দেয়।
আট নম্বর হচ্ছে; কারো হক নষ্ট কেরেছেন? বা দূর্ণীতি করে টাকা ইনকাম করেছেন?
যদি আখিরাতে বাচতে চান তাহলে তার টাকা বা হক
ফিরত দিয়ে দিন, নইলে আখেরাতে সে আপনার সমস্ত নেক আমল ধরে টানবে। মিশকাত- ৩৭৫৩।
নয় নম্বর হচ্ছে; ভয়স ছিল, ক্ষমতাও ছিল। তখন রিকশাওয়ালাকে ১০ টাকা বেশি
দাবী করার কারণে কশিয়ে চর মেরেছিলেন। এর নাম হচ্ছে দুর্বল এর উপরে যুলুম, এটি অত্যন্ত
বড় অপরাধ। জাহান্নাম থেকে বাচতে হলে তার হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে নিন। নইলে একদিন আপনার
আমল নামা সে টান দিবেই দিবে এবং আপনি যাবেন, জাহান্নামে।
দশ নম্বর হচ্ছে মহিলারা গায়ে সুগন্ধি মেখে পর পুরুষদের পাশ দিয়ে হেটে
গেছেন? এ ধরণের কাজ জীবনে আপনি যতবার করেছেন, ততবার যেনার অপরাধ হয়ে গিয়েছে। এক্ষতি
তাওবা করুন। আর কখনো পর পুরষের সামনে সুগন্ধি মেখে হাটাচলা করবেন না। এটা আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করে গিয়েছেন। হ্যা সুগন্ধী আপনি আপনার স্বামীর
সাথে একান্তে বা ঘরের ভিতরে ব্যবহার করতে পারেন। তখন সুগন্ধি ব্যবহার করতে কোন অপরাধ
নেই বরং ছওয়াব রয়েছে।
এগারো নাম্বার হচ্ছে; যতবার আপনি সুদ খেয়েছেন বা দিয়েছেন, বা সুধের কাজে
সহযোগীতা করেছেন? ততবার আপনি মায়ের সাথে যেনা করার মতো জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হয়েছেন,
যার পরিনাম জাহান্নাম।
বার নম্বর হচ্ছে যতবার আপনি অমুসলিমকে খাইয়েছেন বা উপকার করেছেন, মনে
রাখবেন ততবার আপনি দানের ছাওয়াব পেয়েছেন। এবং আল্লাহ তায়ালা আপনার উপর খুশি হয়েছে কারণ
আপনি একজন অমুসলিমকে খাইয়েছেন বা দান করেছেন। কিন্তু অতি উৎসাহিত হয়ে তার পুজা আর্চণায়
যোগ দেওয়া, তাকে এসএমএস দিয়ে পুজার শুভেচ্ছা জনানো অথবা তার পূজায় নিজের গা কে ভাসিয়ে
দিয়ে আপনি শিরক করেছেন তো জাহান্নামের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। আল্লাহ তায়ালার নিকট
খাস তাওবা ব্যতিত এই পাপাচার থেকে কখনোই আপনি মুক্তি পাবেন না এবং জাহান্নামের আগুন
থেকেও রক্ষা পাবেন না। যতবার আপনি, জন্মদিন, মৃত্যু দিন, বিবাহ বার্ষিকী বা কোন দিবস
পালন করেছেন এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন ততবার আপনি বিদায়াত করেছেন। আর রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাপারিশ বেদায়াত কারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
চৌদ্দ নম্বর হচ্ছে ভিক্ষুক; এক্ষেত্রে একটু কথা বলে রাখি, ভিক্ষুক দেখলে
আমরা অনেকেই বলি আল্লাহর রাসুল ভিক্ষুক ব্যক্তি পছন্দ করেন না। এই যা তুই এখান থেকে
চলে যা। অর্থাৎ ভিক্ষা দিবো না। এখানে একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহর রাসুল
ভিক্ষুক ব্যক্তি পছন্দ করতেন না ঠিক, কিন্তু দান করতে তো অনুৎসাহিত করেননি। দানকে তো
তিনি বাধ্যতামুলক করেছেন। যদি কোন অসহায় ভিক্ষুক আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে কিছু দেন, করুন
সুরে আপনার সামনে এ কথাটি বলে, আর আপনার তাকে কিছু দেওয়া মতো ক্ষমতা থাকে, তাহলে না
দিলে কিন্তু আপনি গোনাহগার হবেন- আবু দাঊদ- ১৬৭২ নং হাদিস।
হ্যা ভিক্ষুক যদি বলে ভাই আমাকে কিছু দেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এই কথাটা যুক্ত
না করে অথবা শুধু বলে আমাকে সাহায্য করুন তাহলে, মনে চাইলে আপনি তাকে কিছু দিতে পারেন,
আবার ইচ্ছে হলে নাও দিতে পারেন। কিন্তু আল্লাহর ওয়াস্তে বললে, আপনাকে কিছু না কিছু
দিতেই হবে। কারণ আরসের মালিক আল্লাহর নামে সে আপনার নিকট সাহায্য চেয়েছে। যে মালিক
মুলত আপনাকে খাওয়াচ্ছেন এবং আপনার সকল সম্পদ তারই দান।
পনের নম্বর হচ্ছে স্ত্রী বা শ্বশুরবাড়ীর লোকদের প্ররোচনায় নিজের বাবা
মাকে অবহেলা করা। এটি এখন বর্তমান সময়ে একটি ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। এই পাপাচারে একদম
ফেসে যাবেন না।
মনে রাখবেন পিতা মাতা সবার উপরে অবস্থান করবে। তাদের হক আদায় আপনাতে করতেই
হবে। অন্য যে কারো হকের পূর্বে তাদের হক আদায় করা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ষোল নম্বর হচ্ছে; অফিসের কাচে ফাকি দেওয়া কিন্তু মাস শেষে পুরো বেতন নিয়ে
যাচ্ছেন আর আপনি অফিসের কাজে ফাকিবাজী করছেন?
মনে রাখাবেন কেয়ামতের দিন কোম্পানির মালিককে আপনার আমলনামা দিয়ে দেওয়া
হবে। আর তার গুনাহ আপনার আমলনামায় যুক্ত করে দেওয়া হবে। কারণ আপনি বেইমানী করেছেন,
টাকা নিয়েছেন, বেতন নিয়েছেন, কিন্তু চাকরীতে আপনার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন নি।
সতের নম্বর হচ্ছে; ধুমপান বা যেকোন নেশাদার দ্রব্য দিয়ে নেশা করা। মনে
রাখবেন নেশা করার পরবর্তী চল্লিশ দিন আল্লাহর রহমাত আপনার উপর থাকবে না। তাই নেশাদ্রব্য
থেকে দূরে থাকুন।
আঠারো নম্বর হচ্ছে ওয়াদা ভঙ্গ করা। মনে রাখবেন ওয়াদা ভঙ্গ করলে আপনি মুনাফিক।
আর জাহান্নাম উদ্বোধন হবে মুনাফিকদের দিয়ে। কাফের মুশরিকদের দিয়ে জাহান্নাম উদ্বোধন
হবে না।
উনিশ নম্বর হচ্ছে; কর্মচারীকে চুক্তি ঘন্টার চেয়ে অতিরিক্ত খাটিয়েছেন
আর বিনিময়ে কিছুই দেন নি? এর খেশারত একদিন আপনাকে দিতে হবে। হয়তো আপনার আমলনামার পুরোটাই।
একুশ নম্বর দান করার সমর্থ আছে কিন্তু তারপরও দান করলেন না। কঞ্জুস এবং
কৃপন থাকলেন? আপনাকে খুবই ভয়াবহ মৃত্যু যন্ত্রণা দেওয়া হবে। যদি আপনি উদার এবং দানশীল
না হন।
বাইশ নম্বর কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন? কিংবা চাদাবাজী
করেছেন? ঘুষি নিয়েছেন? কিন্তু ফেরত দেননি? আমল নামা ভারী করুন, কারণ এটা দিয়ে একদিন
শোধ করতে হবে।
তেইশ নাম্বার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেখানো পদ্ধতি
বা দিয়ে পীর সাহেব নিত্য নতুন যে পদ্ধতী দিয়েছেন বা এমন কিছু যদি দিয়ে থাকেন যেটা আল্লাহর
রাসুল করেন নি, সেই পদ্ধতিতে আমল করেছেন তো ধরা খেয়েছেন। মনে রাখবেন রাসুলের সুপারিশ
আপনার জন্য নয়, কারণ বেদায়াতকারীদের আল্লাহর রাসুল সুপারিশ করবেন না।
চব্বিশ নম্বর হচ্ছে ঘরে কোরআন কিনে ফেলে রেখেছেন কিন্তু তা পড়েন ওনা বা
অনুধাবন করেন না? মনে রাখবেন এই কুরআন একদিন আপনার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ দেবে।
পচিশ নাম্বার হচ্ছে; মহিলারা স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ীর লোকাদের বদনাম করছেন?
আজ থেকে এসব বাদ দিয়ে দিন। স্বামীরা স্ত্রী বার তার পরিবারের লোকদের নামে বাদনাম করছেন?
আজ থেকে এসব বাদ দিয়ে দিন ইস্তেগফার পড়ুন। আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ।
মনে রাখবেন এই পাপাচার আল্লাহ কোনদিন ক্ষমা করবেন না। যারা আত্মীয়তার
বন্ধনকে সমালোচনা এবং পরনিন্দা দ্বারা দুর্বল করে তোলে। মনে রাখবেন, আত্মীয়তার বন্ধুন
বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে যাবে না।
হে আল্লাহ আপনি আমাদের এই সকল স্বভাবগুলো থেকে, মৃত্যুর পূর্বে তওবা করে
ফিরে আসার তৌফিক দান করুন- আমিন
আমি জানি অনেক ভাইদের মাঝে এই স্বভাবগুলো আছে। আমি নিজেও এ সকল স্বভাব
থেকে ১০০ ভাগ পৌত পবিত্র তাও বলার সুযোগ নেই।
তাই আসুন দিল থেকে সবাই ইস্তেগফারের মাধ্যমে ওয়াদা করি যে এসকল স্বভাব
আর কোনদিন আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে ধারণ করবো না।
আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।