আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের কিছু অলংঘনীয় বিধানসমূহে একটি অন্যতম বিধান হলো, তিনি জালেম মুসলমানের বিপক্ষে মজলুম কাফের কেউ সাহায্য করেন। অর্থাৎ যার উপরে অত্যাচার করা হয়েছে সে যদি কাফের হয়, আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন অত্যাচারী মুসলিমের
বিরুদ্ধে চলে যান। কারণ পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষকে আল্লাহ পাক অত্যন্ত ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। হোক সে হিন্দু, হোক সে মুসলিম, হোক সে খ্রিস্টান। তার উপরে অন্যায়ভাবে জুলুম হলে আল্লাহপাক সেটা সহ্য করতে পারেন না। তবুও তিনি জালেমকে কোন ছাড় দেন না, হোক সে মুসলিম। জুলুমের শাস্তি এত ভয়াবহ ও দ্রুত যে দুনিয়া থেকে এর সূচনা হয়। আখেরাতে এর পরিনতী কতো মারাত্মক ও ভয়াবহ তা স্বয়ং এক আল্লাহ পাকই জানেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এই অন্যায় থেকে আমাদের প্রত্যেককে বিরত থাকার পাশাপাশি, মজলুম ব্যক্তির প্রার্থনার শক্তি সম্পর্কেও সচেতন করেছেন। আমাদের রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন, মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থাকো। সাবধান! যদিও সে কাফের হয়, তার বদদোয়া আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন সরাসরি কবুল করেন।
সৃষ্টির শুরু থেকে আল্লাহ পাক কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে রেখেছেন। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে অনেক উত্থান-পতনের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এসব নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন হয়নি তার। যুগে যুগে তার এমন অমোঘ বিধি-বিধান এবং নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়ন লিপিবদ্ধ হয়ে আছে পৃথিবীর ইতিহাসে।
যে কয়েকটি বিষয় আল্লাহ পাক নিজের জন্যও নিষিদ্ধ করে রেখেছেন- সেসবের মধ্যে সর্বপ্রথম বিষয়টি হচ্ছে, জুলম বা অন্যায়।
মুসলিম শরীফের বর্ণিত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক আমাদের লক্ষ্য করে বলছেন, হে আমার বান্দারা! আমি নিজেই আমার ক্ষেত্রে জুলম হারাম করে নিয়েছি ও এবিষয়টিকে তোমাদের পরস্পরের জন্যও নিষিদ্ধ করে দিলাম। তোমরা একে অপরের ওপর জুলম করো না।
আজকের সমাজ জীবনে একেবারে সাধারণ বিষয়ে একে অন্যের ওপর বিরাজমান জুলম করা কিংবা সমাজের বৃত্তবান লোকের দ্বারা সাধারণ মানুষের উপরে জুলুম করা। প্রতিবেশি সাহসী এবং শক্তিশালী হওয়ার কারণে, দুর্বল প্রতিবেশির উপর জুলুম করা। বড় ভাই বা ছোট ভাই শক্তিশালী হওয়ার কারণে ছোট ভাইয়ের উপরে জুলুম করা।
অথবা পরিবারের অন্যকোন সদস্যদের উপরে শক্তিমানদের জুলুম করা। এ যাবতীয় জুলুমই বড় ধরণের অমার্জণীয় অপরাধ।
এর কঠিন শাস্তি ও পরিণতির প্রতি সতর্ক করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা জুলম বা অন্যায় করা থেকে বিরত থাকো। এই জুলম কিয়ামতের দিন ঘোর অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে। (মুসলিম)
সুপ্রিয় আলোর পথের যাত্রীবৃন্দ আজ আপনাদের জন্য, জুলুম এবং অত্যাচার থেকে বাচতে চমৎকার কিছু দোয়া নিয়ে হাজির হয়েছি। ইনশাআল্লাহ আমরা এগুলোর উপরে সবাই আমল করার চেষ্টা করবো।
বিপদ-আপদ, দুঃখ-বেদনা ইত্যাদি মানুষের উপর আসে, কিছু বিপদ আছে, যা আল্লাহর পক্ষ হতে পরীক্ষামূলক বান্দার উপর পতিত হয়। আর কিছু বিপদ-আপদ আছে যেগুলো একে অপরের ক্ষতির জন্য করে থাকে, এসব পরিস্থিতিতে মানুষের ধৈর্য ধারণ করা উচিত। বিপদাপদে কিভাবে সাহায্য চাইতে হবে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তা শিখিয়ে দিয়েছেন। সুরা ইউনুস এর আয়াত ৮৫ এবং ৮৬ তে আল্লাহপাক অত্যন্ত সুন্দরভাবে বলেছিলেন,
রাব্বানা লাতাজাআলানা ফিতনাতাললিল কাওমিজ জুয়ালিমিন ওয়া নাজ্জিনা বিরাহমাতিকা মিনাল কাওমিল কাফিরিন।
অর্থাৎ হে আমাদের পালনকর্তা আমাদের উপর এ জালেম কওমের শক্তি পরীক্ষা করিও না। আর আমাদেরকে অনুগ্রহ করে ছাড়িয়ে দাও এই কাফেরদের কবল থেকে। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এর প্রতি ঈমান আনয়ন করার পর, ফেরাউন বনি ইসরাইলের উপর জুলুম অত্যাচার শুরু করে। তারা এ বিষয়ে মুসা আলাইহিস সালামকে অবহিত করলে, মুসা আলাহিস সালাম আল্লাহর উপর ভরসা করতে বলেন। তখন বনি ইসরাইল সম্প্রদায় আল্লাহর উপর ভরসা করেন।
আল্লাহ বনি ইসরাইলের সম্প্রদায়কে ফিরাউনের ভয়াবহ জুলুম থেকে হিফাজত করেন এবং ফিরাউনকে তার দলবল সহ নীলনদে ডুবিয়ে মারেন।
এখনো মানুষ মানুষের উপর অন্যায় ভাবে অত্যাচার জুলুম করে থাকে। সব ধরনের অত্যাচারে আল্লাহর কাছে কোরআনের এই আয়াত এর মাধ্যমে দোয়া করা যেতে পারে। যাতে করে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াবী অন্যায় অত্যাচার জুলুম নির্যাতন থেকে হিফাযত করনে।
যাবতীয় বিপদ ও মুসিবত দূর করে দেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের কবল থেকে বনি ইসরাইল জাতিকে হেফাজত করেন। যাতে রয়েছে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয়। তাই আপনার পার্শ্ববর্তী কেউ আপনার উপর জুলুম করছে আপনার বস আপনার সাথে জুলুম করছে, এমনকি পারিবারিকভাবেও পরিবারের অন্য কেউ আপনার সাথে জুলুম করেছে, হোক জুলুম! যে রকমই হোক না কেন, যারা দ্বারাই হোক না কেন, দিন থেকে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীনের কাছে সাহায্য চেয়ে যান। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, আল্লাহর কাছে জুলুম কারী ব্যাক্তির জন্য হেদায়েত চাইবেন। কখনো তার ধ্বংস প্রথমেই যাইবেন না। যদি একান্তই তার নসিবে হেদায়েত না থাকে, তাহলে আপনি এক পর্যায়ে ধ্বংস চেতে পারেন।
তবে দোয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যেন আমরা সকলে এ দোয়া করি, হে আল্লাহ আপনি যে ব্যক্তি আমার ওপর জুলুম করছে, তার নসিবে হেদায়েত থাকলে তাকে হেদায়েত করে সরল-সঠিক পথ দান করুন। কেননা এই পৃথিবীতে কোন মানুষ জাহান্নামি হোক তা আমি চাইনা। আপনি তো কলবের পরিবর্তনকারী, আল্লাহ আপনি তার অন্তরকে পরিবর্তন করে দিন। হে আল্লাহ যদি সে আমার ওপর নির্যাতন বন্ধ না করে যদি তার নসিবে হেদায়েত না থাকে, তবে আমাকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দান করতে আপনি তাকে সরিয়ে নিয়ে যাই হোক।
যাই হোক সুরা ইউনুসের ৮৫ এবং ৮৬ নং যে আয়াতটি আমরা কিছুক্ষণ আগে তিলাওয়াত করেছিলাম, এবং জুলুমের জন্য আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে যে আয়াতটি তিলাওয়াত করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছিলেন এর আমল আমরা প্রত্যেক নামাযের পর পাঠ করবো।
সুরা ফালাক, সুরা নাস, সুরা ইখলাছ সকাল বিকাল ৩ বার পাঠ করবো।
ইনশাআল্লাহ আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের যাবতীয় জুলুম থেকে হিফাজত করুন, আমিন।
ভালোবাসার কত গল্পইতো পৃথিবীতে রয়েছে, লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ. ইউসুফ-জুলেখা, হ্যা ব্যক্তিগত জীবনেও আমরা আমাদের ভালোবাসার মানুষটি আমাদের কতটা ভালোবাসেন, কত পরীক্ষা-নিরিক্ষার মাধ্যমেই তো যাচাই করছি।
আচ্ছা কখনও কি আমরা এমনটা যাচাই করেছি যে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রভু মহান আল্লাহ তায়ালা আমাকে ভালবাসেন?
আসুন আজ আমরা যাচাই করবো আল্লাহ কি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন?
যদি আল্লাহু সুবহানা ওয়া তায়ালা কোন ব্যক্তিকে ভালোবাসেন তখন তিনি জিবরাঈল আলাইহিস সালাম কে ডেকে বলেনঃ “আমি আল্লাহ এ ব্যক্তিকে অনেক ভালোবাসি, এখন তুমিও একে ভালোবাসো। ফলে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাকে ভালোবাসতে শুরু করেন এবং আকাশের অধিবাসীদের ঘোষণা দেনঃ এ ব্যক্তিকে আল্লাহ অনেক ভালোবাসেন এখন থেকে তোমরাও একে ভালোবাসো।
অতঃপর তারাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। এরপর পৃথিবীর মানুষও এ ব্যক্তিকে ভালোবাসতে শুরু করে"। বিশ্বজুড়ে শুরু হয়, এই ভালোবাসার খেলা। আর এই পৃথিবীতে সেই ভালোবাসার শ্রেষ্টত্তর অধিকারী ছিলেন হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এটি হচ্ছে কোন মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়ার ইসলামের মূলনীতি।
এমনকি এই মূলনীতির আলোকে আল্লাহ আমাদের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা প্রদর্শন করেন। মাঝেমাঝে আমরা প্রায় মনে মনে নিজেরদের প্রশ্ন করি- আল্লাহ কি আমাকে ভালোবাসেন? সত্যিই কি আল্লাহ জিবরাঈল আলাইহিস সালাম কে বলেন – সত্যি তিনি কি আমাকে ভালোবাসে? সত্যিই আল্লাহ আমাদের অনেক ভালোবাসেন।
বিশ্বাস করুন, বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসার নমুনাস্বরূপ কিছু আয়াত আপনাদের সামনে উপস্থাপনা করছি। সুরা বাক্বারায় আল্লাহ বলেন, "আল্লাহ তার বান্দার সহজ চান"-কোরআনে আল্লাহ আরো বলেন "আল্লাহ মানুষকে সর্বোত্তম গঠনে সৃষ্টি করেছেন"-আল্লাহ আরও বলেন, "আল্লাহ আমাদের সর্বোত্তম ভালো চান এবং আমাদের জন্য যা কল্যাণকর তাই তিনি করেন"। আল্লাহ তার সৃষ্টির ব্যাপারে সর্বোচ্চ ও অতুলনীয়ভাবে মনোযোগী। (আল্লাহু আকবর)
আল্লাহর এই ভালোবাসা পেতে হলে আমাদের কি করণীয়? কি গুণ আমাদের থাকতে হবে? আর থাকলেও তা কি আমাদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে আছে? আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কিত এই ধরণের আরো কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরে আমাদের কোন কোন বিষয়ে মনোযোগী হতে হবে তা আজ আলোচনা করছি।
১-আপনি কি সর্বোচ্চ অনুসরণীয় ব্যক্তি রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনুসরণ করছেন? আল্লাহ আমাদের জীবনধারণ, চলাফেরা, আধ্যাত্মিক বিষয়ে তার পছন্দের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। আর তার দেখানো পথটি হচ্ছে রাসুল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতের পথের অনুসরণ, যেখানে আমাদের সর্বোত্তম কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যারা আল্লাহর প্রেরিত শেষ নবী হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পথে নিজেদের পরিচালিত করে, তারা আল্লাহর পথেই আছে।
আর আল্লাহ তাদেরকেই ভালোবাসেন, যে তার দেখানো পথে চলে। "হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলঃ যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন। তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন। আল্লাহ সর্বোচ্চ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু" সুরা আল-ঈমরান আয়াত ৩১।
তৃতীয়ত আপনি সৎকাজ করতে কতটুকু মনযোগী? আপনি কি মডেলের গাড়ি ব্যবহার করেন, তা আল্লাহ দেখবেন না, কিন্তু তিনি আপনি কীভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন তা দেখেন। আল্লাহ আপনার বাড়ি কতটুকু জায়গা জুড়ে আছে তা দেখবেন না কিন্তু দানের ব্যাপারে আপনি কতটুকু মহৎ তা কিন্তু ঠিকিই দেখবেন। আল্লাহ আপনার বেতনের অঙ্কের পরিমাণ দেখবেন না কিন্তু আপনার চরিত্রের পরিমাণ দেখবেন। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। "যারা সৎকর্ম অগ্রগামী যেমন: সুসময়ে ও দুঃসময়ে দান করে এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন"
আপনি কি ইসলামের উপর অবিচল? আপনি দুইটি বিষয়ের মুখোমুখি, যেকোনো একটি গ্রহণ করতে হবে - বিষয়টি সঠিক কিন্তু অবিচল থাকা কঠিন, অথবা বিষয়টি সহজ কিন্তু ভুল। আপনাকে অবশ্যই সঠিক বিষয়টি গ্রহণ করতে হবে, কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক পথের উপর অবিচল থাকতে আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। আপনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একেবারে পরিশ্রান্ত তবুও এর প্রতিষ্ঠায় আপনাকে অবিচল থাকতে হবে।
হয়ত আপনার জীবন আপনার কাছে মূল্যবান, কিন্তু তা কোরবানি করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কিন্তু আপনাকে ধৈর্যের সাথে লেগে থাকতে হবে, কখনো আল্লাহর দেওয়া দায়িত্বে অবহেলা করতে পারবেন না। 'আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে ধৈর্য ধরুন' "আল্লাহ ধৈর্যশীলদের ভালোবাসেন"- সুরা আল-ঈমরান :১৪৬ নং আয়াত।
আপনি কি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেন? যারা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা (ভরসা) করে তারা যখন ক্ষতি ও কষ্টের সম্মুখীন হয়, তখন তারা মনে করিয়ে দেয় এটার আল্লাহর পরিকল্পনা। যারা আল্লাহ-তে ভরসা করে- তারা বিশ্বাস করে তাদের দোয়া আজ হোক কাল অবশ্য কবুল হবে। যারা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তারা কখনো আশা হারায় না। আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র হতে হলে, আল্লাহতে দৃঢ় বিশ্বাসী হোন! নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর ভরসা করেন, তিনি তাদের ভালোবাসেন। আপনি কি ন্যায়পরায়ণ, যারা ন্যয়পরায়ণ তারা কখনও অহংকার বশতঃ অন্যের সাথে ভাষা ও সংস্কৃতির বৈষম্য দেখায় না। তারা হয়তো কাউকে অপছন্দ করে তবুও তার ন্যায্য অধিকার আদায় করে । তারা সত্যের পথে এমনকি এই সত্য তার জন্য ক্ষতিকর হলে অটুট ভাবে সমর্পণ করে যায়, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত।
আল্লাহর ভালোবাসা পেতে ন্যায়ের অবস্থানে থাকুন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদের ভালোবাসেন। আপনি কি অতিরিক্ত কিছু ভালো কাজ করেন? হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ বলেন বান্দা তার উপর অর্পিত ফরজ কাজ আদায় করার মাধ্যমে আমার নিকট চলে আসে। এছাড়া বান্দা যখন আমার পছন্দনীয় নফল কাজ করে তখন সে আমার আরও অধিক নিকটবর্তী হয়।
তখন তার কান আমার কান হয়ে যায়, যা দিয়ে সে শোনে। তার দৃষ্টি আমার দৃষ্টি, যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত আমার হাত হয়ে যায়, তার পা আমার পা হয়ে যায়, যা দিয়ে সে হাটে। সে যা চায় আমি তা দান করি, সে যদি সুরক্ষা চায়, আমি তাকে সুরক্ষীত করি- সহীহ বুখারী।
আল্লাহ আপনার নফল কাজে খুশি হয়ে বেশি ভালোবাসবেন। ফলাফলে বলতে পারি উপরে আলোচিত অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর আপনার ক্ষেত্রে হ্যা হয়, তাহলে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের ক্ষেত্রে আপনার সুযোগগুলো যেনে রাখুন, তিনি আপনাকে অবশ্যই ভালোবাসেন। আপনি এগিয়ে যান এবং আপনার মনে এ সফলতা যেন অন্যের চেয়ে নিজেকে উত্তম ভাবার অনুভূতি না সৃষ্টি করে।
সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, তিনি যেন আপনাকে ভালোবাসেন, এবং তার পথে পরিচালিত করেন, তাদের জন্য দোয়া করুন যারা আল্লাহর ভালোবাসা অর্জণের চেষ্টার করে যাচ্ছে।
যদি উপরের অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর আপনার জন্য না হয়, তাহলে দোয়া করুন, আল্লাহ যেন আমাদের জন্য যা উত্তম তাই করেন এবং তিনি যেন আমাদের হেদায়েত দেওয়ার মাধ্যমেই তার ভালোবাসার পাত্র হওয়ার সুযোগ দেন। যাতে আমাদের অবস্থান থেকে আরও ভালো হতে পারি। যাতে আরও বেশি শান্তিপ্রিয় হতে পারি।
আমরা এভাবে আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য উত্তম কিছু এবং তার ভালোবাসা অর্জন করতে দোয়া করবো। ইনশাআল্লাহ,
আল্লাহ যেন তার পথে আমাদের অবিচল রাখেন। আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনে আমাদের পরিপূর্ণতা অর্জনের প্রয়োজন নেই, তবে যা আমাদের কল্যাণকর তাই চাইবো তার কাছে, যিনি অত্যান্ত ক্ষমাশীল এবং প্রেমময়।
সর্বশেষ একটি হাদিস দিয়ে শেষ করছি। আবু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ খুব ভালোবাসেন, তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে হাসেন এবং তাদের কারণে খুশি হন।
প্রথমত সেই ব্যক্তি যার নিকট স্বদলের পরাজয় প্রকাশ পেলেও নিজের জান কুরবানী দিয়ে আল্লাহ আযযাহ অজাল্লার ওয়াস্তে যুদ্ধ করে। এতে সে শহীদ হয় অথবা আল্লাহ তাকে সাহায্য দান করে বিজয়ী করেন ও তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হন।
তখন আল্লাহ বলেন, আমার এই বান্দাকে তোমরা লক্ষ্য করো, আমার জন্য নিজের প্রাণ দিয়ে কেমন ধৈয্য ধরেছে।
দ্বিতীয়ত সেই ব্যক্তি যার আছে সুন্দরী স্ত্রী এবং নরম ও সুন্দর বিছানা, কিন্তু সে এসব ত্যাগ করে রাত্রে উঠে নামাজ পরে। এর জন্য আল্লাহ বলেন, সে নিজের প্রবৃত্তিকে দমন করে আমাকে স্মরণ করছে। অথচ ইচ্ছা করলে সে নিদ্রা উপভোগ করতে পারতো।
আর তৃতীয় সেই ব্যক্তি যে, সফরে থাকে, তার সঙ্গে থাকে কাফেলা। কিছু রাত্রি জাগরণ করে সকলে ঘুমে ঢলে পরে, কিন্তু সে শেষরাত্রে উঠে কষ্ট ও আরামের সময় নামাজ পড়ে- সুবহানআল্লাহ
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের এ তিন জাতের যে কোন এক ধরণের মানুষ হবার সৌভাগ্য দান করুন- আমিন।