আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আরবরা সফরে বের হলে একে অপরের খেদমত করত। আবু বক্বর ও উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সাথে একজন খাদেম ছিল। একবার সফর অবস্থায় ঘুম থেকে তারা উভয় জাগ্রত হয়ে দেখলেন যে, খাদেম তাদের জন্য খাওয়া প্রস্তুত করেন নি। তখন তারা পরস্পরকে বললেন দেখ ঐ ব্যক্তিটি বাড়ির ঘুমের মত ঘুমাচ্ছে। অর্থাঃ এমনভাবে নিদ্রায় বিভোর যে, মনে হচ্ছে সে বাড়ীতে রয়েছে। সফরে নয়। আমরা এখানে খুধার্থ বসে আছি, এখনও খাবার প্রস্তুত হয়নি। অতপর তারা তাদের জাগিয়ে দিয়ে বললেন, যাও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে যাও এবং বলো আবু বক্বর ও উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনাকে সালাম দিয়েছেন, এবং আপনার কাছে তরকারি চেয়ে পাঠিয়েছেন, নাস্তা খাওয়ার জন্য। লোকটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট গেলেন এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ঘটনা খুলে বললেন।
আল্লাহর রাসুল বললেন, তারা তো তরকারি খেয়েছে। তখন
সে লোকটি এসে বললো যে, রাসুল বলেছেন, আপনারা তরকারি খেয়েছেন। তখন তারা খুবি বিস্মিত
হলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে এসে বললেন, ইয়া রাসুল্লাল্লা
আমরা আপনার নিকটে এসে, লোক পাঠালাম তারকারি তলব করতে।
অথচ আপনি বলছেন আমরা তরকারি খেয়েছি। তখন নবী করিম
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললো, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের অর্থাৎ এই খাদেমের
যার অনুপস্থিতিতে যার বদনাম করছিলে, তার গোসত খেয়েছ। অতপর ঐ সত্ত্বার কসম যার হাতে
আমার প্রাণ নিশ্চয় আমি ঐ খাদেমটির গোসত তোমাদের সামনের দাতের ফাক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি।
তারা বললেন, ইয়া রাসুল্লাল্লা আপনি আমাদের জন্য ক্ষমা
তলব করুন। আলবানি এই হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বলেন, একদা আমরা নবী করিম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে ছিলাম। এমতাবস্থায়
একজন ব্যক্তি উঠে চলে গেলো। তার প্রস্থানের পর একজন তার সমালোচনা করলো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তোমার দাদ খিলাল করো।
লোকটি বললো কি কারণে দাদ খিলাল করবো? আমি তো কোন গোসত
ভক্ষণ করিনি। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় তুমি তোমার ভাইয়ের গোসত ভোক্ষণ করেছো, কারণ তার
অনুপস্থিতিতে এতক্ষণ যা বলেছো তা গোসত ভক্ষণ করার মতই। অর্থাৎ গীবত করেছো।
গীবত কবরে শাস্তি ভোগের অন্যতম কারণ। একদা রুসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি থমকে দাড়ালেন
এবং বললেন এই দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের কে তেমন বড় কোন পদের শাস্তি
দেওয়া হচ্ছে না। যা পালন করা তাদের পক্ষে কষ্টকর ছিল। এদের একজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে
চোগলখোরী করার কারণে এবং অন্যজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে পেশাবের বেপারে অসতর্কতার কারণে।
অপর হাদিসে চোগলখোরের পরিবর্তে গীবত করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
গীবত’ অর্থ বিনা প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির দোষ অপরের
নিকটে উল্লেখ করা। ইবনুল আছীর বলেনঃ গীবত হল কোন মানুষের এমন কিছু বিষয় যা তার অনুপস্থিতিতে
উল্লেখ করা, যা সে অপছন্দ করে। যদিও তা তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে। এসব সংজ্ঞা মূলত হাদিস
হতে নেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গীবতের পরিচয় দিয়ে
বলেনঃ “গীবত হল তোমার ভাইয়ের এমন আচরণ বর্ণনা করা, যা সে খারাপ জানে”। গীবত করার পরিণামঃ
গীবত কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত
গীবতের পাপ
সুদ অপেক্ষা বড়; বরং হাদিসে গীবতকে বড় সুদ বলা হয়েছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে-এর নিকটে আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছাফিইয়া রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু -এর সমালোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম আপনার জন্য ছাফিইয়ার এরকম এরকম হওয়াই যথেষ্ট। এর দ্বারা তিনি ছাফিইয়ার
বেঁটে সাইজ বুঝাতে চেয়েছিলেন।
অর্থাৎ রাসুলের সাথে পারফেক্ট নেই সাফিয়াকে মেচ করেনা।
এতটুকু শুনে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “হে আয়েশা! তুমি এমন
কথা বললে, যদি তা সাগরের পানির সঙ্গে মিশানো যেত তবে তার রং তা বদলে দিত”
গীবত জাহান্নামে শাস্তি ভোগের কারণঃ রাসূলুল্লাহ্
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “মিরাজ
কালে আমি এমন কিছু লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখগুলি পিতলের তৈরি, তারা
তা দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল ও বক্ষগুলিকে ছিঁড়ছিল।
আমি জিজ্ঞাস করলাম, এরা কারা হে জিবরাইল? জিবরাইল
আলাইহিস সালাম বললেন তিনি বললেনঃ এরা তারাই যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইজ্জত-আবরু
বিনষ্ট করত”। আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামিন গোপনে গোনাহের মত খেয়ে ফেলা আমাদের সকল আমলকে
অন্যতম জঘন্য এ পাপ অর্থাৎ গীবত থেকে রক্ষা করুক আমিন।
…………………………………………………………….
মানসিক প্রশান্তি,
হৃদয়ের পরিতৃপ্তি, অগাধ সুখ, সকল প্রকার দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি কে না
চায়।
এগুলো ছাড়া আর কি খোঁজে
আমরা। মানুষ তো এগুলোই খোঁজে। প্রকৃতপক্ষে সুখী আর পরম আনন্দঘন সুন্দর একটা মানব
জীবনের কথা ভাবলে এসবের বাইরে আলো চাওয়ার কিছুই থাকেনা।
এসব অর্জনের জন্য কেউ বা
ধর্মীয় উপায় অবলম্বন করেন। আবার কেউ ধর্মের তোয়াক্কা না করেই কিছু বাস্তবিক
পন্থা অবলম্বন করে তা অর্জন করার চেষ্টা করেন। তবে কেবল মাত্র একজন মুমিন ব্যক্তি
এ দুইয়ের সফল সমন্বয় ঘটাতে পারেন। যিনি নিজেকে তার স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করে
দিয়েছেন। অন্য কোন উপায়ে এসবের আংশিক অর্জন সম্ভব হলেও হতে পারে। তবে পরীপূর্ণ
মানসিক প্রশান্তি, হৃদয়ের পরিতৃপ্তি অকৃত্রিম সুখ সবরকম দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠা
থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব, কেবলমাত্র নিজেকে স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ করার
মাধ্যমেই।
এর ভিন্ন অন্য কোন পথ নেই।
অনেকে আছেন যারা সেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেয়ে সুখে শান্তিতে বেঁচে আছেন। অনেকে আবার
ব্যর্থ হয়ে দুঃখ কষ্টে দিন পার করছেন। অনেকে আছেন এ দু'দলের মাঝামাঝি পর্যায়ে এরা
নিজ প্রচেষ্টা অনুযায়ী ফল পেয়েছেন প্রশ্ন হল কীভাবে সেই সাফল্য অর্জন সম্ভব।
চলুন দেখে নেই, আজকের
পুরো ভিডিওতে একটা মানুষ প্রকৃত সুখ কিভাবে পেতে পারে আমরা আমাদের কাঙ্খিত সাফল্য
কিভাবে অর্জন করতে পারে। তা নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
ইমান এবং সৎকর্ম আলোচ্য সাফল্য
অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মৌলিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন বলেন, মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারী যে কেউ সৎ কর্ম করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই
আনন্দময় জীবন দান করব, এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব- সূরা
নাহল আয়াত ৯৭।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
আমাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, যদি কেউ হোক সে পুরুষ অথবা নারী ঈমান আনার সাথে সাথে
সৎকর্ম করে, তাহলে তিনি তাকে ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতে আনন্দময় জীবন আর শ্রেষ্ঠ
পুরস্কার দান করবেন।
উভয় জগতে আনন্দময় জীবন
আর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দানের উদ্দেশ্যটি খুবই স্পষ্ট এখানে। আর তা হলো আল্লাহ
রাব্বুল আলামিন এর প্রতি আন্তরিক অকোপট এবং অকৃত্রিম বিশ্বাস। এমন বিশ্বাস যা
বিশ্বাস স্থাপনকারী সৎকর্মশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে। তাকে ইহকালের সরল সঠিক পথ দেখায়,
আর জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। তিনি সকল কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে তার স্রষ্টা আর
সেই ব্যক্তির সকল কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে তার স্রষ্টা প্রদত্ত বিধান ও দিক
নির্দেশনা মেনে চলেন।
জীবনে বিপদ আপদ সুখ-দুঃখ
যাই আসুক না কেন স্রষ্টা প্রদত্ত দিক নির্দেশনার অনুসরণ থেকে তিনি কখনোই বিরত হন
না। জীবনে যাই ঘটুক সবকিছুকে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়ে আমাকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন
কর্তৃক নির্ধারিত সিদ্ধান্তের প্রতি তার অকুণ্ঠ সমর্থন তার মধ্যে এমন এক চেতনার
উন্মেষ ঘটায় যা তাকে আরও সৎকর্মশীল করে তোলে। তার কৃতজ্ঞতাবোধ প্রতিদান প্রাপ্তির
সম্ভাবনা কে আরো বাড়িয়ে দেয়। তিনি যতদূর সম্ভব চেষ্টা করে বিপদ, আপদ, দুঃখ কষ্ট
থেকে বেঁচে থাকার।
তবে বিপদ যদি চলেই আসে
তিনি সহিষ্ণু হোন। বিপদে ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতি সামাল দেন তিনি। বিপদ আসে তার
কাছে আশীর্বাদ হয়ে। তাকে বিপদে ধৈর্যশীল হতে শেখায় এভাবেই ধৈর্যশীলতার ছোটখাটো
বিপদ-আপদ, দুঃখ কষ্টোর আড়ালে একজন মুমিনের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। ফলে আল্লাহর
অনুগ্রহ আর তার পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সহিহ মুসলিম এ প্রিয় নবী
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসে এমনটি বলা হয়েছে।
মুমিনের অবস্থা কতই না চমৎকার। তার সব অবস্থাতে কল্যাণ থাকে। এটি শুধু মুমিনের
বৈশিষ্ট্য যে যখন সে আনন্দ থাকে তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এবং যখন সে কস্টে
থাকে তখন সবর করে আর এ উভয় অবস্থায় তার জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে
সুবাহানাল্লাহ সহি মুসলিম হাদীস নং ২৯৯৯।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ
সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন একজন মুমিনের জীবনে ভালো মন্দ যাই ঘটুক না কেন,
সর্বাবস্থায় সে তার প্রতিটির জন্য প্রতিদান পেয়ে থাকে, যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে
থাকে।
দুশ্চিন্তা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
ইত্যাদি থেকে মুক্তির আরেকটি উপায় হলো মানুষের প্রতি সদয় আচরণ করা। ব্যক্তি
জীবনে অনৈতিক হয়েও কেউ মানুষের সাথে আচরণ করতে পারে।
একজন ধর্মহীন নাস্তিক
হয়েও মানুষের সাথে কথা ও কর্মে সদয় এবং ন্যায় নিষ্ট হতে পারে। কিন্তু একজন
ঈমানদার এর বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন অন্যের প্রতি সদয় আচরণ করেন আল্লাহ রাব্বুল
আলামীনের পক্ষ থেকে প্রতিদান পাওয়ার আশায়। আল্লাহর প্রতি তার আন্তরিক বিশ্বাস
থাকে মানুষের প্রতি সদয় হওয়ার শিক্ষা দেয়।
আল্লাহর প্রতি তার অগাধ
বিশ্বাস আর প্রতিদান পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাকে আরো বেশি সৎকর্মশীল করে তোলে। ফলে
আল্লাহ তার চলার পথকে সহজ করে দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, তাদের অধিকাংশ
গুপ্ত পরামর্শে কোন মঙ্গল নিহিত থাকে না, হ্যা, তবে যে ব্যক্তি এরুপ যে দান অথবা
কোন সৎকাজ কিংবা লোকের মধ্যে পরস্পর সন্ধি করে দেবার উৎসাহ প্রদান করে এবং যে
আল্লাহর প্রসন্নতা সন্ধানের জন্য অনুরোধ করে আমি তাকে মহান বিনিময় প্রদান করব।
সূরা আল নিসা আয়াত ১১৪
উক্ত আয়াতে আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন যে মহান বিনিময়ের কথা বলেছেন তার একটা অংশ হলো দুশ্চিন্তা,
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে মুক্তি। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আরেকটি কারণ
হলো স্নায়ুবিক উত্তেজনা এবং বিভিন্ন বিশৃংখল ভাবনা যা সব সময় মনকে আচ্ছন্ন করে
রাখে। এর থেকে মুক্তির উপায় হলো নিজেকে সবসময় ভাল কাজে ব্যস্ত রাখা বা কল্যাণকর
জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করা। এতে করে মনের ভেতর কুচিন্তা আর ঠাই পাবে না।
ফলে ভাবনার জগতে পরিবর্তন
আসবে। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী ভাবনাগুলো মন থেকে বিদায় নেবে।
মনের সুখ ফিরে আসবে মনোবল দৃঢ় হবে।
নিজেকে এমন কাজে ব্যস্ত
রাখা উচিত যে কাজ নিজের কাছে উপভোগ্য বলে মনে হয়। যে কাজ করে আনন্দ পাওয়া যায়।
তাহলেই কাঙ্খিত ফলাফল আশা করা যায়। তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবচেয়ে ভালো জানেন।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা,
দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে রেহাই পাওয়ার আরেকটি পথ আছে, আর তা হলো অতীতে কী হয়েছে
বা কি হয়নি, ভবিষ্যতে কি হবে এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে শুধু বর্তমান
মুহূর্তগুলোকে কি করে অর্থপূর্ণ এবং সার্থক করা যায় তার প্রতি অধিক মনোযোগ দেওয়া।
আর একারণেই প্রিয় নবী
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের
কাছে দোয়া করতে যেন অতীতে কী হয়েছে বা ভবিষ্যতে কি হবে এ ধরনের ভাবনা দুশ্চিন্তা
তার মধ্যে সৃষ্টি না হয়।
কারণ অতিত কিংবা ভবিষ্যত
দুইয়ের মধ্যে কোনটিই মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয় নয়। তাই এই মুহূর্তে কি করছি,
ঠিক করছি না ভুল করছি, এটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আর এভাবে যদি বর্তমানকে
নিয়ে ভাবা যায় তাহলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়ে উঠবে। মনে দুশ্চিন্তাও আর
ঠাই পাবে না। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই নিজে
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কোন বিষয়ে দোয়া করতেন। কিংবা তার সাহাবীদের কোন
দোয়া শিক্ষা দিতেন তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহ লাভের আশা করার পাশাপাশি
তা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য জোড় তাগিদ দিতেন।
দোয়া করার পাশাপাশি
অবশ্যই সাফল্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রত্যেকেরই উচিত এমন কিছু
অর্জনের চেষ্টা করা যা ইহকাল এবং পরকাল উভয় জগতের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে আর এ জন্য
চেষ্টা করার পাশাপাশি আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে সাহায্য চেয়ে দোয়া করতে হবে।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যা কল্যাণকর তাই অর্জনের চেষ্টা কর, এজন্য আল্লাহ্র কাছে
সাহায্য চাও এবং নিরাশ হইয়োনা।
যদি খারাপ কিছু ঘটে তাহলে এমনটি বোলোনা যে, যদি এমন
এমন করতাম তো এমন এমন হতো।
বরং তুমি বল যে, আল্লাহ্ যা নির্ধারণ করেছেন ও চেয়েছেন
তাই করেছেন, কারণ যদি কথাটি শায়তানের কর্ম কে খুলে দেয়।” [সহীহ্ মুসলিম]
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখিয়েছেন যে ভাল কিছু অর্জন করতে হলে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের
সাহায্য এবং প্রচেষ্টা দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁর সাহায্য ছাড়া শুধু প্রচেষ্টা দিয়ে কোন কিছু
অর্জন করা সম্ভব নয়। আবার ব্যর্থতার ক্ষেত্রে নিরাশারও কোন অবকাশ নেই। অতীতে যা হওয়ার
হয়ে গেছে এবং ভবিষ্যতে যা হবে তাও আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের অলঙ্ঘনীয় ইচ্ছা অনুযায়ী
হবে।
প্রিয় নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোন বিষয়
সংঘটনের ক্ষেত্রে দুটি অবস্থার কথা তুলে ধরেছেন—
প্রথম অবস্থাটি এরকম যে, হয়ত কেউ একটা কিছু অর্জনের
জন্য চেষ্টা করছে অথবা কোন কিছু থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে হয়ত সে সফলও
হচ্ছে। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে, প্রাপ্ত সাফল্য আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের সাহায্য
ছাড়া সম্ভব হয়নি।
এই ধরনের সম্ভাব্য সাফল্যের জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল
‘আলামীনের কাছে অবশ্যই সাহায্য চাইতে হবে। আবার কিছু বিষয় আছে যেগুলোর ক্ষেত্রে হাজার
চেষ্টা চালিয়েও সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। সে সব ক্ষেত্রে মনের শান্তি বিনষ্ট না করে
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে।
উক্ত বিষয়টিকে মনে রেখে জীবন যাপন করলে জীবনে কখনও
অতৃপ্তি বা অপ্রাপ্তিবোধ আর পীড়া দেবে না। দুশ্চিন্তা কিংবা মানসিক অতৃপ্তিও আর থাকবে
না।
মানসিক পরিতৃপ্তি এবং হৃদয়ের প্রশান্তি লাভের অন্যতম
উপায় হল আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনকে স্মরণ করা। মহান প্রতিপালক আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন
কে স্মরণের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি এবং আন্তরিক পরিতৃপ্তি অর্জিত হয়।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্র যিক্র-এ
অন্তর প্রশান্ত হয়।” [সূরা আল রা’দ; আয়াত ২৮]
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন এর স্মরণ অর্থাৎ জিক্র আমদের
হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁকে স্মরণ করার মাধ্যমেও আমরা প্রতিদানের আশা করি যা আমাদেরকে
আরো বেশী প্রতিদান লাভের বাসনাকে বাড়িয়ে দেয়।
উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে রেহাই পাওয়া
এবং সুখি হওয়ার আরেকটি উপায় হলো; দুশ্চিন্তার কারণগুলোকে দূর করার চেষ্টা করা এবং
যা কিছু সুখ বয়ে আনে তা অর্জনের চেষ্টা করা। এক্ষেত্রে অতীতের পীড়াদায়ক ঘটনাগুলোকে
ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অতীতকে ভেবে দুঃখ পাওয়া সময়ের অপচয়
ছাড়া কিছুই নয়।
তাই এসব বিষয়ে ভাবনা চিন্তা বাদ দেওয়ার পাশাপাশি
ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
ভবিষ্যৎ ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়া একেবারেই অমূলক। কারন
ভবিষ্যৎ হল অজ্ঞাত একটি বিষয়। ভবিষ্যতে ভাল হবে, না মন্দ হবে তা কেউই আগাম বলতে পারেনা।
বিষয়টি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীনের হাতেই ন্যাস্ত। আমরা
তাঁর বান্দা হিসেবে যা করতে পারি তা হল; ভাল কিছুর জন্য চেষ্টা করা আর মন্দকে দূরে
সরিয়ে রাখা।
অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, যদি নিজ
প্রতিপালকের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস এবং আস্থা রেখে অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়,
তাহলে মনে প্রশান্তি বিরাজ করবে এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে পরিত্রান
পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রান পাওয়ার অন্যতম কার্যকর উপায় হলো,
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা থেকে
নিম্নোক্ত দোয়াটির মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালার
কাছে সাহায্য চাইতেন।
স্ক্রীনে
আপনারা আরবি উচ্চারণটি দেখতে পাচ্ছেন। আমি বাংলা অর্থটি বলছি; হে আল্লাহ! তুমি
আমার দ্বীনকে সংশোধন করে দাও যা আমার জীবনের ভিত্তি এবং আমার পার্থিব ও কর্মকাজকেও
সংশোধন করে দাও। যার মাধ্যমে রয়েছে আমার জীবিকা এবং আমাকে দাও সর্বোত্তম সমৃদ্ধি
আখেরাতে, যেখানে আমার প্রত্যাবর্তন আমার জীবনকে পুণ্য অর্জনের মাধ্যম বানিয়ে দাও
এবং মৃত্যুকে করো সমস্ত মন্দ থেকে বেঁচে যাওয়ার অবকাশ।
তিনি
আরো বলতেন: “আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরজু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা, আইনিন
ওয়া আসলিহলি শা’নি কুল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতা”।
অর্থ
হে আল্লাহ! আমি আমার করুণা কামনা করি, তাই এক মুহূর্তের জন্য তুমি আমাকে আমার
নিজের উপর ছেড়ে দিও না এবং তুমি আমার সকল কাজকর্মকে সংশোধন করে দাও। তুমি ছাড়া
সত্য এবং ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ নেই।
ইহকালীন
ও পরকালীন কল্যাণ অর্জনের জন্য যদি কোন ব্যক্তি দোয়া গুলো খালেস নিয়তে ও
আন্তরিকতার সাথে পাঠ করে এবং সাথে সাথে কল্যাণ অর্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে
তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে সফলতা দান করবেন। তার চাওয়া পাওয়া
এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করে দেবেনই তার দুশ্চিন্তাকে হৃদয়ের প্রশান্তি দিয়ে বদলে
দেবেন।