আমরা দোয়া করি, কিন্তু দোয়া কি কবুল হচ্ছে। কিভাবে বুঝবো?
We pray, but are prayers being answered? How to understand?
আমরা
দোয়া করি, কিন্তু দোয়া কি কবুল হচ্ছে। কিভাবে বুঝবো? যে আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে কিনা?
চোখ বন্ধ হাত বেধে রাখা ঠোট নড়ছে, মুখ চলছে অবিরাম, কিন্তু মন আর হৃদয় অন্য জগতে। মুখের
কথা আর অন্তরের চিন্তায় বিস্তর ফারাক। এই যদি হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কিছু
চাওয়ার সময় আমাদের মনের অবস্থা, তাহলে দোয়া কবুল না হওয়াতে আর আশ্চর্য্যের কি আছে বলুন?
চলুন
যেনে নেই যে গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিশেষ ভুলের কারণে আমাদের দোয়া সমূহ আল্লাহ রব্বুল
আলামিনের কাছে কবুল হয় না।
১.
হারাম উপার্জন: রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক লোক অনেক
দূর থেকে সফর করে এসেছে। তার চুল-কাপড় এলোমেলো, ধূলিধূসরিত। আর সে তার দুই হাত আকাশের
দিকে তুলে বলছে: “ইয়া রব! ইয়া রব!” অথচ তার খাবার হারাম, তার পানিও হারাম, তার পরনের
কাপড় হারাম, আর তার তার শরীর পুষ্ট হয়েছে হারাম দিয়ে।
এমন
অবস্থায় কীভাবে তার দু’আ কবুল হতে পারে? [সহি-মুসলিম]। আমাদের উপার্জনের প্রতিটা পয়সা
যদি হারাম উৎস অথবা সুদ থেকে এসে থাকে, তাহলে কীভাবে আমরা আশা করতে পারি যে, আল্লাহ
সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের দু’আ কবুল করবেন? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের
জন্য সুদকে হারাম করেছেন, অথচ আমরা এমনভাবে সুদ গ্রহণ করি যেন এটা কোন অপরাধই না! আল্লাহ
সুবহানাহু তা’আলা এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সুদখোরদের সাথে
যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এত বড় হুশিয়ারি আসা সত্ত্বেও আমরা সুদ ছাড়তে পারি না!
আফসোস
যে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলাকে খুশি করার জন্য এই সামান্য কাজটাও করতে পারি না,
অথচ আমরা আশা করি যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন আর আমাদের
সমস্ত চাহিদা মিটিয়ে দেবেন। কত বড় অবিবেচক আমরা!
৩.
জিনা আমরা অনেকে আল্লাহ তা’আলার কাছে কিছু চাইতে থাকি এমন অবস্থায় যে আমরা চাওয়ার
মুহূর্তেও জঘন্য সব গুনাহতে লিপ্ত। এগুলো এমন সব গুনাহ যার গোপনীয়তা আমরা সমাজের সামনে
খুব সতর্কতার সাথে বজায় রাখি। অথচ যখন আমরা এসব করি তখন আল্লাহ তা’আলার দৃষ্টিসীমার
মধ্যেই করি! জিনার ব্যাপারে ইসলামের নিষেধাজ্ঞা এতটাই কঠোর যে, আল্লাহ তা’আলা আমাদের
এর ধারের কাছেও যেতে নিষেধ করেছেন। আর এতে জড়িয়ে পরাত অনেক পরের কথা। [সুরা আল-ঈসরার:
৩২ নং আয়াত]। যখন জিনাকারি ব্যাক্তি তার লজ্জাকর কাজ সমাপ্ত করে, তখন সে তার বিশাল
অপরাধের বোঝা নিয়েই আল্লাহ তা’য়ালার কাছে আরও নিয়ামত চাইতে থাকে! সুবহানাল্লাহ! এভাবে
আল্লাহর সামনে হাজির হতে কি তার লজ্জা করে না?
৪.
নম্বর বাধা হচ্ছে কবিরা গুনাহ, গীবত করা, পরনিন্দা করা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অন্যকে
কষ্ট দেয়া এবং এরকম অন্যান্য সকল হারাম কাজ কবীরা গুনাহ আল্লাহ তা’আলা ত্যাগ করেত
বলেছেন এবং এ সকল কাজের সাথে যুক্ত হতে নিষেধ করেছেন। আর আমরা মনে করি যে, আমরা আল্লাহ
তা’য়ালার অবাধ্যতা করতে থাকা অবস্থায় তিনি আমাদের দু’আ কবুল করবেন!
কোন
সাহসে আমরা আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার সামনে দাঁড়াই যখন কিনা আমরা তাঁর হুকুমের ঠিক
বিপরীতে কাজ করে চলছি! তবে আশার বিষয় হচ্ছে যে; আমরা যেই বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু
করেছিলাম তার আরও একটি দিক রয়েছে। যারা আল্লাহ তা’আলার একান্ত বাধ্য, যারা তাদের আমলের
ব্যাপারে আন্তরিক, যারা আল্লাহর ভয়ে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, আর আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির
আশা নিয়ে ভালো কাজ করে, দু’আর প্রতিফল তাৎক্ষণিক না পেলেও তাদের হতাশ হওয়ার কোন কারণ
নেই।
“তোমরা
কি ভেবেছ যে তোমরা এমনি এমনিই জান্নাতে প্রবেশ করবে; যদিও তোমাদের অবস্থা এখনও তোমাদের
পূর্ববর্তীদের মতো হয়নি? অর্থ- সংকট, দুরাবস্থা,
ক্লেশ তাদের স্পর্শ করেছিল এতদুর পর্যন্ত যে, [এমনকি তাদের] রাসূল এবং তাঁর সাথে ঈমানদারগণ
বলে উঠেছিলেন যে, ‘কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে?’ জেনে রাখ, অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য অতি
সন্নিকটে”। [সুরা আল বাকারা আয়াত নাম্বার ২১৪] আমাদের চারপাশের সবকিছুই পরীক্ষা। কোনো
সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ চাইবে না এই পরিক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে চূড়ান্ত ও সবচাইতে বড়
পুরস্কার হাত ছাড়া করতে।
আল্লাহ
যাঁকে কুরআনের সান্ত্বনা দিয়েছেন, সেখানে সেই রাসূলকে আল্লাহ পরীক্ষা করেছেন, সেখানে
আমরা কি? হাল ছেড়ে দিবেন না। আমাদের রব আমাদের পক্ষে আছেন। আন্তরিকতার সাথে চোখের
পানি ফেলতে থাকুন; আল্লাহ তা’আলার প্রতি সর্বোচ্চ ভরসা রেখে দু’আ করতে থাকুন। জেনে
রাখুন, আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, “যখন আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন”।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- হযরতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর নিকট কিছুই চায়না, আল্লাহ তায়ালা তার উপর রাগ করেন। এই হাদিস শরীফে শুধু চাওয়া ও অন্তরের গভীর থেকে চাওয়া উভয়ের তার্থে সামিল। সুবহানআল্লাহ, আল্লাহ কত দয়াবান।
মানুষের নিকট কিছু চাইলে মানুষ রাগ করে আর আল্লাহর
নিকট না চাইলে আল্লাহ রাগ করেন। হাদিসে কুদসিতে আছে হুযুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, আমি যখন বান্দাকে ভালোবাসি, তখন তার কান
হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শুনে। তার চোখ হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখে (আল্লাহু আকবার)।
তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে ধরে। তারপর পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে। অর্থাৎ বান্দার
প্রত্যেকটি অঙ্গপতঙ্গে আমার খোদায়ী শক্তি এসে যায়। ফলে বান্দা যা করতে ইচ্ছে করে সবকিছুই
আমার দেওয়া মতাবলে করতে সক্ষম হয়।
যদি সে আমার নিকট সাহায্য প্রার্থণা করে আমি তাকে
অবশ্যই সাহায্য করবো। সুবহানআল্লাহ।
উক্ত হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমানিত হয় যে, আল্লাহর প্রিয়
বান্দাদের দোয়া আল্লাহ পাকের দরবারে অবশ্যই গৃহীত হয়। হযরতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে
দেওয়া হয় না।
রোজাদারের দোয়া যখন সে ইফতার করে। ন্যায় বিচারক শাসকের
দোয়া এবং অত্যাচারিদের দোয়া। যার উপর নিপীড়ন নির্যাতন করা হয়েছে অন্যায় ভাবে। তার দোয়াকে
আল্লাহ মেঘের উপর উঠিয়ে নেন এবং তার জন্যে আসমানের দড়জা খুলে দেওয়া হয় এবং পরওয়ার দিগারে
আলম বলেন আমার ইজ্জতের সম্মানের কসম আমি নিশ্চয় তোমাকে সাহায্য করবো।
যদিও কিছু সময় প্রয়োজন হয়। হযরতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বলেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তিনটি দোয়া কবুল হয়, তাতে
কোন সন্দেহ নেই। পিতার দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও নিপিড়ীতের দোয়া। রসুলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদৃতি
অনুযায়ী অসংখ্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, তাদের দোয়া আল্লাহ পাক কখনই ফিড়িয়ে দেন না। আজকে
এই রিপোর্টটিতে আমরা অনেকগুলো হাদিস থেকে বিশ্লেষণ করে একটি লিস্ট করেছি যে ব্যক্তিদের
দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। রসুলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস অনুযায়ী তারা হলেন। বিপদগ্রস্থ
ও অসুস্থ্য ব্যক্তির দোয়া, অত্যাচারিত মজলুম ব্যাক্তির দোয়া. সন্তানের জন্য বাবা মায়ের
দোয়া, যে সন্তান একনিষ্ঠ মনে বাবা মায়ের খিদমত করে সে সন্তানের ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া,
মুসাফিরের দোয়া, রোজাদার যখন ইফতারের সময় দোয়া করে সে দোয়া, এক মুসলমানের জন্য অন্য
মুসলমানের অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণের জন্য দোয়া। হাজীগণ হজ্জ শেষে বাড়ি ফেরার পথে যে
দোয়া করে। আল্লাহর খাটি বান্দাদের দোয়া।
যাই হোক এই রিপোর্টে আমরা যে ৬ শ্রেণির মানুষ এমন
রয়েছে, যাদের দোয়া আল্লাহ কখনই ফেরত নেন না। অর্থাৎ তাদের দোয়া কবুল হয়। আপনি কি জানেন?
সেই ৬ শ্রেণির মানুষ কারা? চলুন আমরা একটু বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের অবস্থান যেনে নেই।
১. অসুস্থ ব্যাক্তির দোয়া : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, তুমি যদি কখনো কোনো অসুস্থ ব্যাক্তিকে দেখতে যাও তখন
তাকে বলো তোমার জন্য দোয়া করতে। কারণ অসুস্থ ব্যাক্তির দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার মতোই
কার্যকর হয় সুবহানআল্লাহ। শুধু তাই নয় রোগী দেখার বিষয়ে হাদিসে এসেছে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে
শুনেছি যে ব্যক্তি কোন সকাল বেলা কোন অসুস্থ্য মুসলমানকে দেখতে যায় ৭০ হাজার ফেরেস্তা
বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত ৭০
হাজার ফেরেস্তা দোয়া করেন, শুনানে তিরমিযি ৯৬৭ নম্বর হাদিস। তবে রোগীকে দেখতে যাওয়ার
ক্ষেত্রে কিছু সুন্নত রয়েছে যা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে আরও সহযোগী এক. অযু সহকারে রোগীকে
দেখতে যওয়া। এই মর্মে হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন যে ব্যক্তি উত্তমরুপে অযু করে ছাওয়াবের
উদ্দেশ্যে কোন অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায় তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছরের পথ দূরে
রাখা হবে সুবাহানআল্লাহ। দ্বিতীয়ত হচ্ছে রোগীর অবস্থা বুঝে শরীরে হাত রেখে রোগের কথা
জিজ্ঞেস করা।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শশ্রুষার
পূর্ণতা হলো- রোগীর কাপলে বা শরীরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করা আপনি কেমন আছেন? সুবহানআল্লাহ।
রোগীর সামনে এমন বলা- যাতে সে সান্তনা লাভ করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম কোন রোগীকে দেখতে গেলে বলতেন সান্তনামূলক কথা। বিভিন্ন হাদিসের এরশাদ থেকে
বর্ণনা করতেন। যেমনটি আপনি করতে পারেন। আপনার প্রিয় বন্ধু অসুস্থ অবস্থায় গিয়ে তার
মাথার শীহরে বসে বলতে পারেন- হে ভাই বা বন্ধু তুমি কি জানো? প্রতিটি রোগের জন্য আল্লাহপাক
রাব্বুল আলামিন মানুষের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। এমনকি পায়ে একটি কাটা বিনলেও মানুষের
গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়, সুবহানআল্লাহ। তুমি অসুস্থ হয়েছো? আল্লাহ তোমার গুনাহ ক্ষমা করে
দিচ্ছেন।
দেখুন একটি হাদিস তার অন্তরে কতটা সাহস জোগাবে। আর
বিনিময়ে আপিন আল্লাহ পাকের দরবারে এমন একজন মানুষ হয়ে যাবেন, ঠিক যেন একজন ফেরশতার
মত, যাদের দোয়া আল্লাহ পাকের দরবারে সাথে সাথে কবুল হয়ে যায়। রোগীর কাছে বেশি সময় ক্ষেপন
না করা। আরেক বর্ণনায় এসেছে রোগী দেখার উত্তম পন্থা হলো তারাতারি ফিরে আসা। আপনি চাইলে
তার জন্য কিছু ফল নিয়ে যেতে পারেন। অথবা আপনি রোগ বুঝে তার জন্য এমন কিছু খাবার নিতে
পারেন যা তার জন্য অবশ্যই উপসম মূলক হতে পারে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, রোগী যদি কিছু খেতে চায়, তবে তাকে খেতে দেওয়া উচিৎ।
রোগীর সম্মানে উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা। ইবনে আব্বাস
রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা বলেন সুন্নত হলো রোগীর পাশে কম সময় বসা এবং নিচু আওয়াজে কথা
বলা। রোগীর জন্য দোয়া করা। বিভিন্ন দোয়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন কোন রোগীর কাছে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি ৭ বার পাঠ করলে মৃত্যু রোগ ছাড়া
সব রোগ থেকে সে সুস্থ হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ। দোয়াটি হলো: আসআলুল লাহাল আজিম রাব্বানা
আরসিল আজিম আই ইয়াস ফি-আক্বা- আবু দাউদ ৩১০৬ নং হাদিস। রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া
চাওয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা রোগী দেখতে গেলে
তার কাছে নিজের জন্য দোয়া চাও। কেননা তার দোয়া ফেরেশতার দোয়ার সমতূল্য। সুবহানআল্লাহ।
আপনি রোগীর দেখতে গেলেই তাকে যেকোন মূল্যে খুশি রাখুন।
তার জন্য খাবার নিয়ে যান, তার জন্য দোয়া করুন। আর ফিরে আসার সময় অবশ্যই ছোট্ট করে বলুন,
যে ভাই আপনি আমার জন্য একটু দোয়া করুন সুবহান আল্লাহ। রাসুলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম গ্যারান্টি দিয়েছেন একজন রোগী কোন সাধারণ মানুষের জন্য দোয়া করা ঠিক তেমনি,
যেমন একজন ফেরেসতার দোয়া। ফেরেশতার দোয়া যেমন আল্লাহ পাকের দরবারে সাথে সাথে কবুল হয়।
একজন রোগীর দোয়াও সাথে সাথে কবুল হয়ে যায়।
যাই হোক সংক্ষেপে আমরা বাকী ৫ শ্রেণির মানুষ যাদের
দোয়া আল্লাহ কবুল করেন, তাদের বর্ণনা গুলো জেনে নেই।
রোজাদার ব্যক্তির
দোয়া : রোজাদার ব্যক্তির দোয়া জাদুর মতো কাজ করে। অনেক উলামায়ে কেরাম ইবাদাত ও দোয়া
করার জন্য রোজার রাখার মুহূর্তকে সোনালী মুহুর্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। হযরত ওমর ইবনে
আস রাদ্বিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
যে, যখন রোজাদার ব্যাক্তি ইফতার করে তখন তার দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। (সুনানে ইবনে
মাজাহ) তৃতীয় নম্বরে রয়েছে সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া : হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ধরনের
দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকে না।
এক. মজলুম বা নিপীড়িত ব্যাক্তির দোয়া। দুই. মুসাফিরের
দোয়া। তিন. সন্তানের জন্য পিতার দোয়া। সুতরাং কোন পিতা মাতা তার সন্তানের জন্য খুশি
হয়ে দোয়া করলে সে দোয়া অবশ্যই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের দরবারে কবুল হবেই। চতুর্থ
নম্বর হচ্ছে কোন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার জন্য অপর ব্যাক্তির : কোনো ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে
তার জন্য অপর একজন দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহর কাছে পৌঁছার আগেই আল্লাহ তাআলা তা
কবুল করেন। উম্মু দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার স্বামী
আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে
শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি তার ভাই এর অনুপস্থিতিতে তার জন্য দুআ করে, তার জন্য একজন নিয়োজিত
ফিরিশতা আমীন বলতে থাকে এবং বলে, তোমার জন্যও অনুরূপ হোক, সুবহান আল্লাহ।
সুতরাং কোন ভাইয়ের কল্যাণের জন্য যদি আপনি দোয়া করেন
আপনার জন্য আরেকজন ফেরেশতা দোয়া করতে থাকবে। আল্লাহু আকবার আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি
অপর মুসলমান ভাইর জন্য দোয়া করার তৌফিক দান করুক। আর মনে রাখবেন অন্য মুসলিম ভাইয়ের
জন্য দোয়া করার ক্ষেত্রে মনে কোন সংকীর্ণতা রাখবেন না।
আল্লাহ তাকে অর্থ সম্পদ দ্বিন দুনিয়ায় সকল কিছুতে
কল্যাণ দান করুক এই রকম মন থেকে উদারভাবে তার জন্য দোয়া করবেন এবং আল্লাহ আপনার জন্য
ঠিক অনুরূপ দোয়ায় আরেকজন ফেরেশতার মাধ্যমে কবুল করে নিবেন। সুবহান আল্লাহ। পাচ নম্বর
হচ্ছে মজলুম বা নিপীড়িত ব্যাক্তির দোয়া : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, তোমরা মজলুমকে জালেমের বিরুদ্বে সাহায্য করো। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিন ধরনের
দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকে না।
আর যার মধ্যে প্রথমেই হচ্ছে মজলুম বা নিপীড়িত ব্যাক্তির
দোয়া। আর বাকি দুই জন হলেন সন্তানের জন্য পিতার মাতার আর মুসাফিরের দোয়া। ষষ্ঠ নম্বরে
হচ্ছে মুসাফির ব্যক্তির দোয়া : হাদীস শরীফে আছে, যা কিছুক্ষণ আগের হাদিসের বর্ণনায়
উদৃতি দিয়েছি যখন কোনো ব্যাক্তি সফরে থাকে তখন তার দোয়া কবুল হয়। প্রকৃত পক্ষে মুসাফির
তিনি যিনি ৪৮ মাইল পথ অতিক্রমের লক্ষে বাসা থেকে বের হন। নিজ বাড়ি থেকে বের হলে মানুষ
অনেক ক্ষানি অসহায়ত্ব অনুভব করেন। একজন ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় যেখানে থাকেন সেখানে
তিনি সর্বোত্তম ব্যবহারের হকদার। তার সাথে উত্তম আচরণ করা হলে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ
বা দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।
সুতরাং কখনও কোন মুসলিম ভাই যদি কোথাও মুসাফির দেখি
অসহায় অবস্থায় আছে, অবশ্যই অবশ্যই আমরা তার সাহায্য করার চেষ্টা করবো। তাকে অর্থ দিয়ে
হোক, খাদ্য দিয়ে হোক, আশ্রয় দিয়ে হোক তার সাহায্য করবো। মনে রাখবেন কোন মুসাফির যদি
হাত তুলে আপনার জন্য সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করে দোয়া করে আল্লাহু আকবার আপনি অবশ্যই অবশ্যই
সে দোয়ার ফল ফ্রুশ ফলাফল ভোগ করবেন। ইনশাআল্লাহ সর্বশেষ বলতে চাই উমর বিন খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছেন তিনি বলেন, রাসুলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, নিশ্চই দোয়া আসমান ও জমিনের মধ্য স্থানে ঝুলন্ত থাকে কোন অংশ আসমানে উদৃত হয়
না।
যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর উপরে দরুদ শরীফ না
পড়। দোয়া কবুল হওয়ার কারণ দোয়া করার পূর্বে তাওবা করে পাপ মুক্ত হয়ে নিবে। দেখা যায়
যে, প্রায় ক্ষেত্রে মানুষের দোয়া কবুল হয় না। এর কারণ হলো পূর্ণাঙ্গভাবে সর্বন্তকরণে
দোয়া হয় না। বরং অস্পস্টতা ও অন্য মনোস্কতার সাথে দোয়া করা হয়। কিংবা দোয়া কারির অন্তর
অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে হযরত কাবুল রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন এক সময় বনি
ইসরাইলের লোকদের মাঝে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। তখন মুসা আলাইহিস সালাম তার উম্মতদেরকে
নিয়ে ময়দানে সমবেত হয়ে পর পর তিনবার বৃষ্টিপারেত জন্য আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের
দরবারে প্রার্থনা করেন। কিন্তু এক ফোটা বৃষ্টিপাতও হলো না। শেষ পর্যন্ত অহি নাজিল হলো,
হে মুসা আলাইহিস সালাম তোমার উম্মতদের মাঝে পরনিন্দাকারী একজন লোক রয়েছে সে ব্যক্তি
তোমাদের দলের মাঝে থাকা পর্যন্ত তোমাদের দোয়া কবুল হবে না। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম
বলেন, হে প্রভু সে কোন ব্যক্তি বলে দিন, তাকে বের করে দিন, অহি নাজিল হলো, আমি পরনিন্দা
করতে নিষেধ করেছি, এখন কিভাবে নিজেই পরনিন্দা করবো আল্লাহু আকবার।
তার মানে আল্লাহ বলছেন, আমি যে ব্যক্তি পরনিন্দা করে,
আমি যদি সে গোনাহগারের পরিচয় তোমার কাছে ফাস করে দেই তাহলে আমি নিজেই পরনিন্দাকারী
হয়ে যাবো, সুবহান আল্লাহ। আল্লাহ পাকের কৌশল আল্লাহ পাকের ভাষা শৈলি কত উন্নত হতে পারে।
তখন হযরত মুসা আলাইহিস সালাম তার সম্প্রদায়ের লোকদের পরনিন্দা করা থেকে তওবা করার নির্দেশ
দিলেন। তখন সবাই নিজের অন্তর থেকে কেদে তওবা করলো। সাথে সাথেই বৃষ্টিপাত শুরু হলো।
আল্লাহু আকবার। দোয়া কবুল না হওয়ার কোন কারণ নেই।
হারাম মাল ভক্ষণ করা বন্ধ করে দিতে হবে। খাছ করে আল্লাহ
পাক রাব্বুল আলামিনের দরবারে দুচোখের পানি ফেরে কেদে কেদে নিজের গোনাহের জন্য ক্ষমা
চাইতে হবে। অতপর দুই হাত তুলে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে যাই চাইনা কেনো। অবশ্যই আল্লাহ
পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের দোয়া করবেনই। ইনশাআল্লাহ।